আমরা জানি প্রেম ভালোবাসা এমন একটি খেলা যেখানে একপক্ষ সব সময় প্রতারিত হয়। তবু অনেকেই প্রেমে পড়ে। কারণ প্রেম অন্ধ। যদিও বা বিয়ে চোখ খুলে দেয়। কিন্তু বিয়ের আগে সব তরুণীই ছেলেদের যে কথাটি সবচেয়ে বেশি বলে তাহলো না। প্রবাদ আছে মেয়েরা যখন না বলে, তখন বোঝায় সম্ভবত। আর যখন বলে সত্যি তখন বোঝায় হ্যাঁ বিয়ের পর নারীরা স্বামীর কাছে যা প্রত্যাশা করে তাহলে পুরুষ মানুষটির উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস। সফল পুরুষ হলো যে অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করে। কিন্তু কাউকে উপহার দেয় না, আর সফল নারী হলো, যে সবার উপহার পায়। কিন্তু কারো সাথে প্রেম করে না। মনে রাখবেন যখন কোনো তরুণী তার বয়ফ্রেন্ডকে সেন্ট উপহার দেয়, বুঝতে হবে সে তার ঘামের গন্ধ সইতে পারে না। লক্ষণীয় ব্যাপার, মেয়ে ফ্রগ ছেড়ে সালোয়ার কামিজ পরতে শুরু করলে পাড়ায় বাবার সম্মান বেড়ে যায়। ছেলেরা সালাম দিতে দিতে অস্থির করে ফেলে। অনেকের মতে ছেলেদের মাথা অনেকটা দরজার হাতলের মত। মেয়েরা ইচ্ছে করলে ঘুরিয়ে দিতে পারে। কেননা একজন মায়ের ২০ বছর বয়স লাগে তার ছেলেকে যুবকে পরিণত করতে। কিন্তু সেই যুবককে গাধায় পরিণত করতে একজন যুবতীর লাগে মাত্র ২০ মিনিট।
গ্রামের খুব সহজ সরল একটি ছেলে, ৫ ভাই ছিল তাদের, নাম তার জীবন। সারাক্ষণ হাসি খুশিতে মেতে থাকতো সে। জীবন কারো দুঃখ সইতে পারতো না। ২০১২ সালের কথা জীবনের এক ভাতিজি পপির মামার বিয়ে, মমতা পপি জীবনকে বলে চাচা তুমি মামার বিয়েতে আমাদের সাথে যেতে হবে। জীবন পপিকে বলে আমি যেতে পারব না পপি। পপি বলে তুমি না গেলে আমি যাব না। জীবন বলে পপি আমি একা যেতে পারবনা। যদি যাই তাহলে আমার বন্ধু আজিজুল ও হেলালকে সাথে নিতে হবে। ইমরান ভাই যাবে না তার হাতে অনেক কাজ। জীবনের কথা শুনে পপি অনেক খুশি হল। তারপর দিন মমতা বলে আজিজুল ও হেলাল মামাকে বিয়ের কার্ড দেব। সবাই বিয়েতে যাবার জন্য রওয়ানা দেয়। পপি জীবনের দিকে বার বার তাকাচ্ছে, পপির খুব ভালো লাগছে, জীবন তার মামার বিয়েতে যাচ্ছে। সাথে তার বন্ধু আজিজুল ও হেলাল। দীর্ঘদিন পর পপি তার মামার বাড়িতে এসেছে। অনেক ভালো লাগছে তার। পপি খুব সুন্দর মনের একটি মেয়ে। যার ভালোবাসা আকাশ পরিমাণ। বিয়ের আনন্দে সবাই মেতে উঠেছে কিন্তু হেলাল একটুও ঘুমাতে পারেনি কারণ সে একটি মেয়েকে খুব ভালোবাসে মেয়েটির নাম অনিমা কিন্তু অনিমা হেলালকে কখনো ভালোবাসেনি। অনিমা ভালোবাসতো জীবনকে। হেলাল তো অনিমার জন্য পাগল। সে অনিমা ছাড়া কিছু বুঝে না, হেলালের কাছে অনিমা একটি ফুটন্ত গোলাপ। অনিমা জানতো হেলালের একটি মেয়ের সাথে প্রেম ছিল। অনিমা একদিন জীবনকে বলে আমি তোমাকে অনেক আগ থেকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি তো আমার দেহটার দিকে কোনদিন তাকিয়ে দেখনি? ভালোও বাসনি। ছোট বোনের মত আমাকে দেখছ। কিন্তু তোমার বন্ধু হেলাল এতে নষ্ট কেন? জীবনের মুখে তো কোন কথা নেই। অবাক হয়ে অনিমার কথা শুনল। আর মনে মনে ভাবে আমি তো জানি অনিমা হেলাল আসলে একটি নষ্ট ছেলে। তারপরও সে আমার বন্ধু। আমি তাকে কিছু বলতে পারি না। হেলালের খালাতো বোন দু’টির সাথে তার প্রেমের ইতিহাস আমি জানি। মনে রাখবেন শুধু চুমু খেলে ভালোবাসা হয় না। সুন্দরী মেয়ে দেখলে শুধু বুকে নিতে হয় না। অনেকে বলে প্রেম করলে বিয়েটা আগে আসে, কেন এখন দেখা যায় প্রেম করে প্রথম দিন একজন আরেক জনকে চুমু খাচ্ছে। প্রেম বিয়ে পরিণাম, প্রেম করলে বিয়ে করতে হবে। বিয়ে এমন এক বন্ধন, যা অনাত্মীয়কে কাছের আত্মীয় বানিয়ে দেয়। প্রেম ভালোবাসা যত গভীর হোক না কেন? কেবল মাত্র বিয়ের পরেই স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে প্রকৃত রূপে চিনতে পারে। লেখিকা রিমা বেগম পপির গল্প আমার খুব ভাল লাগে। উনার সব গল্পই আমি পড়ি।
২০১৩ সালের কথা সকাল ১০টার সময় জীবনের এক বন্ধু ফোন করে জীবন তুমি এখন কোথায়? জীবন বলে আমি তো বাড়িতে। তাহলে তুমি একটু আমার সাথে দেখা করবে। জীবন বলে আমি এখনি চলে আসছি। জীবন যাবার পথে একটি মেয়েকে দেখতে পায়, প্রথম দেখায় জীবন মেয়েটির প্রেমে পড়ে যায়। নাম না জানা সেই মেয়েটি জীবনকে পাগল করে তুলেছে। জীবন রাত হলে ঘুমাতে পারে না মেয়েটি তার চোখে ভেসে উঠে। জীবন মেয়েটির ভালোবাসার জন্য উঠেপড়ে লাগলো। ঠিকানা না জানা মেয়েটির আমার জীবনে ঝড় তুলে দিয়েছে। স্কুলে যাবার পথে প্রায়ই মেয়েটির সাথে জীবনের দেখা হতো। জীবন জানতে পারে মেয়েটি একটি বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। কিন্তু কিভাবে তার সাথে দেখা করা যায়, কথা বলা যায় বুঝতে পারছে না জীবন। হঠাৎ জীবন দেখতে পায় জীবনের এক ভাতিজি নাম ফাতেমা সেও বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। জীবন বলে এই যে ফাতেমা তুমি আমার একটি কাজ করে দেবে? ফাতেমা বলে কি কাজ? জীবন বলে তোমার সাথে পড়ে একটি মেয়েকে আমার খুব ভালো লাগে। ফাতেমা বলে মেয়েটির নাম কি? আমি জানি না? ফাতেমা বলে তাহলে তুমি কাল আমার সাথে স্কুলে যাবে। জীবন বলে ঠিক আছে। পরদিন জীবন স্কুলে যাওয়ার পর ফাতেমা যখন সুমনা বলে ডাকে জীবনতো প্রায় ১০ মিনিট সুমনার দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবে বুঝি ভালোবাসা হয়ে যায়। এভাবে প্রেম হয়। সুমনাকে ভালোবেসে জীবন অনেক বদলে গেল। সুমনার সাথে জীবনের প্রথম দিন দেখা হয় একটি দোকানে। পাশাপাশি বসে দু’জনের কথা হয়। সুমনাকে যে কি মায়া লাগছিল মুখে বলে বুঝতে পারব না। আমার মা বাবা ছাড়া আর কাউকে এতটা ভালোবাসিনি। সুমনার জন্য ছিল যতটুকু ভালোবাসা। এত বিশাল ভালোবাসা ছিল আমার। সুমনাকে একটুও ভুলতে পারিনি। একদিন ভালোবাসার জন্য ছুটে গিয়ে ছিলাম সুমনাদের বাড়িতে রাতে। অনেক দৌড়াতে হয়েছে আমাকে।
অক্টোবরের ৮ তারিখ ছিল সুমনা ও জীবনের ভালোবাসার প্রথম দিন। একদিন সুমনা জীবনকে বলে তার সাথে দেখা করতে। সুমনার সাথে সুমনার বোন নীলিমা ছিল। একটি স্কুলে তাদের দেখা হয়। জীবনের সাথে ছিল জীবনের বন্ধু ইমরান। প্রথম দেখায় ইমরান নীলিমার প্রেমে পড়ে যায়। তারপর ইমরান জীবনকে বার বার নীলিমার কথা বলে। ইমরান বলে জীবন আজ আমি নীলিমার বাড়িতে যাব। রাত ১২টার সময় নীলিমাদের বাড়িতে জীবন ইমরানকে নিয়ে যায়। তাদের ভালোবাসার জয় হল। তাদের বিয়ে হল জীবনের ভালোবাসা অধরা রয়ে গেল। ইমরানও বদলে গেল। জীবনের জন্য নীলিমাকে পেল আমার বড় বোন থাকলে আমি যতটা ভালোবাসতাম, নীলিমা আপুকে আমি ততটা ভালোবাসি। ইমরান ভাই ও নিলিমা আপুর জন্য সুন্দর জীবন কামনা করি। মমতাময়ী হাত সুমনার আমার হাতে লেগেছে। আমি তাকে যা দিয়েছিলাম দারার কাছে দিয়েছে। আমি জনম জনম সুমনাকে ভালোবেসে যাব। দারাকে আমি ছাড়ব না। চিরদিন সুমনা তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমার পৃথিবীর চেয়েও দামী। পবিত্র ভালোবাসার দাম ছিল না। ৫ ডিসেম্বর ইমরান ও নীলিমা আপুর বিয়ে, আমাকে সুমনা যেতে বলেনি। আমি বিয়েতে যাব শুধু সুমনাকে দেখার জন্য। আমি তাকে ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি। সুমনার ভালোবাসা আমার মনটা নাড়া দিয়ে গেছে। যেদিন সুমনা লাল শাড়িতে উনার বউ হবে। সেদিন এই জীবন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। আমার ভালোবাসা ইতিহাস হবে কি না জানি না। ভালোবাসার জন্য জীবন দিয়ে গেলাম। বাস্তবতার ভালোবাসা শুধু অবাস্তবই থেকে যায়। এভাবেই হয়তো অনন্য নিয়তি। লেখক : সদস্য-স্বর্ণালী সাহিত্য পর্ষদ, সিলেট।