শহীদ সিরাজের নামে জামালগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনারটি হারিয়ে যেতে বসেছে

45

নিজাম নুর জামালগঞ্জ থেকে :
মা মাটি দেশের টানে জীবন বাজি রেথে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিলেন এদেশের দামাল ছেলেরা। নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের উপহার দিয়েছিলেন লাল সবুজ পতাকা। আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। অথচ যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমাদের এই স্বাধীনতা দিলেন আমরা কি পেরেছি তাদের জন্য বা তাদের স্মৃতি বিজরীত শহীদ মিনার গুলোর জন্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সাচনা বাজারে শহীদ সিরাজুল হকের নামটি নতুন প্রজন্মের কাছে একটি অপরিচিত নাম। জামালগঞ্জের প্রথম নির্মিত শহীদ মিনারটির কারণে শহীদ সিরাজের সাথে অনেকেরই নামটি পরিচিত ছিল এই শহীদ মিনারের জন্য। এক সময় সাচনা বাজারের নামও শহীদ সিরাজের নামে সিরাজ নগর ছিল। সরকারী স্বীকৃতি না পাওয়ায় পরবর্তীতে সাচনা বাজার নামে রূপ ধারণ করে। স্বাধীনতার বেদি মুলে শহীদ সিরাজের স্মৃতিতে দেদীপ্যমান করে রাখার জন্য তার পবিত্র রক্ত ঝরা স্থানটিতে সংগ্রাম পরবর্তী সময়ে তৈরি করা হয় জামালগঞ্জ থানার একমাত্র শহীদ মিনার। অকুতোভয় বীর সেনানী জগৎ জ্যোতি সহ দেশের শ্রেষ্ট সূর্যসন্তানদের হাতে গড়া শহীদ সিরাজের স্মৃতিতে সাচনা বাজারের এই শহীদ মিনারটি। দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সত্তর ও আশির দশক পর্যন্ত সরকারী ভাবে মহান স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রথম প্রহরে এই শহীদ মিনারটিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হত। নব্বই দশকের কিছু সময় একই ভাবে পালন করা হত। বিংশ শতকের মাঝামাঝিতে ২১ শে ফেব্র“য়ারি,২৬ মার্চ,১৬ ডিসেম্বরের কুজকাওয়াজ সহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার জন্য জামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ব্যবহার ও রাতে শ্রদ্ধাঞ্জলী দেওয়া হত বিদ্যালয়ের অস্তায়ী বেদীতে। সময়ের পরিবর্তনে প্রশাসনও মনে করল, যদি জামালগঞ্জে একটি শহীদ মিনার স্থাপিত হয় তবে আর রাতে সাচনা বাজারে গিয়ে পুস্পস্তবক অর্পণ করা লাগবে না। সেই ভাবেই উপজেলা প্রশাসন সাচনা বাজারের শহীদ মিনারটিকে ফেলে জামালগঞ্জ অডিটোরিয়াম হলের পাশে আধুনিক ভাবে একটি শহীদ মিনার স্থাপন করে। এর পর থেকে সাচনা বাজারের শহীদ মিনারটির প্রতি প্রশাসনের নজর না থাকার কারণে বর্তমানে শহীদ মিনারটি অরক্ষিত। বাজারের সকল ময়রা ফেরার স্থানে পরিচিত হয়ে গেছে শহীদ মিনারটি। সাচনা বাজারের কয়েকটি সংগঠন ও বনিক সমিতি নিজ উদ্যোগে বিশেষ দিবস গুলোতে নিজেরাই শহীদ মিনারটিকে পরিষ্কার পরিচন্ন করে রাখে। বিশেষ করে শহীদ মিনারটির চারভাগের তিন ভাগ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছে বলে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী জানান। স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা জানিয়েছেন জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম গুলোতে বার বার শহীদ মিনারটিকে নিয়ে সচিত্র পতিবেদন তুলে ধরলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। বীর মুক্তিযোদ্ধারা, এলাকাবাসী, সাচনা বাজারের ব্যবসায়ীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুনামগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য কেউই কোন পদক্ষেপ নেননি। এ ব্যাপরে সাচনা বাজার ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম জানান, সাচনা বাজারের শহীদ মিনারটি আমাদের প্রথম ও স্মৃতি বিজরিত শহীদ মিনার। এই শহীদ মিনারটি রক্ষার জন্য আমাদের পরিষদ সকল সহযোগিতা করবে। জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  এস এস শফি কামাল জানান,সাচনা বাজারের শহীদ মিনারটি স্মৃতি ও গুরুত্বের কথা এই প্রথম জানলাম। শহীদ মিনারটির কোন রকমের অবমাননা হতে আমরা রক্ষা করব।অচিরেই সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।