ফাঁসির ৩৬৫ দিন পর পরিবারের দাবী ॥ আব্দুল কাদের মোল্লাকে সরকার হত্যা করেছে

39

কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের ৩৬৫ দিন পর জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে ‘সরকার হত্যা করেছে’ বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে তার পরিবার।
সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ‘মিরপুরের কসাই’ খ্যাত কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এক বছর উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামে তার পরিবার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এদিকে কাদের মোল্লাকে হত্যা করা হয়েছে তার ছেলের এমন দাবির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, কাদের মোল্লার পরিবারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হওয়া উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে কাদের মোল্লার বড় ছেলে হাসান জামিল বলেন, ‘আমার পিতাকে হত্যার ৩৪৮ দিন পর আপিল বিভাগ থেকে আমার বাবার দায়ের করা রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এই রায়ে রিভিউ মেইনটেনেবল বলে সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করেন। সেখানে বলা হয়, রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করা যাবে। অথচ রায় প্রকাশের ৭ দিনের মাথায় তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।’
হাসান জামিল বলেন, ‘আমার বাবা দুনিয়া থেকে বিদায়ের আগে জানতেই পারলো না, সংবিধান অনুসারে তার রিভিউ করার অধিকার আছে কি-না। যখন আইনের পূর্ণাঙ্গ আশ্রয় নেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়, তখন সেটা হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কিছু নয়।’
‘এই সরকার আমার পিতাকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এমনকি এই জালেম সরকার আমার পরিবারের সদস্যদেরকে জানাযায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়নি। আমার বাবার মৃতদেহ শেষবারের মতো একবার দেখার সুযোগও দেওয়া হয়নি।’
হাসান জামিল আরো বলেন, ওই রাতে আমাদের পরিবারের উপর হামলা হলো, জেলে নেওয়া হলো। এটা এতবড় জুলুম যা অবশ্যই দেশবাসী বিচার করবেন।
‘আমি এ দেশের মানুষের বিবেকের আদালতে এই সরকারের অন্যায় ও জুলুমের বিচার চাই। ন্যায়বিচার বঞ্চিত এক অসহায় পিতার সন্তান হিসাবে এই জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই’, যোগ করেন হাসান জামিল।
অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য :  অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে ট্রায়াল কোর্টে কাদের মোল্লা সমস্ত সুযোগ পেয়েছেন। বিস্তারিতভাবে আপিলের শুনানি হয়েছে, সেখানে সুযোগ পেয়েছেন। এই শুনানিতে আদালত ৭ জন অ্যামিকাস কিউরিকে শুনেছেন।’
‘সবশেষে আমরা আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছি, রিভিউ চলবে না। তারপরও রিভিউ পিটিশন দায়ের হয়েছে। দায়েরের পর সেই পিটিশন শুনানি হয়েছে। সেই রায় সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে। সেই রায় পড়ার জন্য আমি কাদের মোল্লার পরিবারকে বলবো।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সেই রায়ে বিস্তারিতভাবে বলা আছে, কেন কাদের মোল্লার রায় পুনর্বিবেচনা করা গেল না। এই সময়ে তারা যেসব বক্তব্য রাখছেন, একটি মহলের প্ররোচণায় তারা এগুলি করছেন। বিচারটাকে অহেতুক প্রশ্নবিদ্ধ করতে তারা এসব বক্তব্য দিচ্ছেন। এসবের কোনো রকম সারবত্তা নেই। মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই এই সব বক্তব্য।’
মাহবুবে আলম কাদের মোল্লার পরিবারের উদ্দেশে বলেন, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষী এসেছে, বিশেষ করে মোমেনার সাক্ষ্য, সেই সাক্ষ্য তারা যাতে পড়ে দেখেন।
তাহলেই বুঝতে পারবেন, কাদের মোল্লা কতখানি অপরাধ সে সময়ে করেছেন এবং কাদের মোল্লাকে আদালত সঠিক দণ্ডই দিয়েছেন।
তার মতে, কাদের মোল্লাকে যদি এই দণ্ড দেওয়া না হতো, তাহলে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রত্যেকেই হতাশ হতো। তারা (কাদের মোল্লার পরিবার) হতাশ হতেন না হতেন সেটা বড় কথা নয়।
আমাদের সর্বোচ্চ আদালত যে বিচার করেছেন, সেই বিচারের পরে তাকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। এটাকে যদি কাদের মোল্লার পরিবার হত্যা বলে ধরে নেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার প্রসেডিং শুরু করা উচিত বলে মন্তব্য করেন মাহবুবে আলম।