কাজিরবাজার ডেস্ক :
পরিবেশ আদালতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ আদালত থাকলেও প্রাণঘাতী মাদকের অপব্যবহার রোধে আলাদা কোনো আদালত নেই। এমনকি প্রচলিত আদালতে মাদকের মামলা পরিচালনার জন্য নিজস্ব জনবলও নেই। মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে সাক্ষীও খুঁজে পাওয়া যায় না। এসব জটিলতায় গত ২ যুগে সারা দেশে ৪৯ হাজার ৮২৩টি মাদকের মামলা আটকে আছে। আর এসব মামলায় বছরের পর পর হাজিরা দিতে গিয়ে স্বল্প জনবল নিয়ে পরিচালিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা সময় নষ্ট করায় অভিযান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সারা দেশে যখন মাদকের ছড়াছড়ি তখন সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় নিজেদের পক্ষে এমন যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন ডিএনসির কর্মকর্তারা। মাদক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বজলুর বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু তার সংস্থাটি ঢাল তলোয়ারবিহীন। অভিযান পরিচালনা করতে গেলে অন্যের সহায়তা নিতে হয়। ঘোষণা দিয়ে অভিযানে নামলেও তথ্য ফাঁস হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা জেনে যায়। বিশাল সীমান্তে সুরক্ষা না থাকায় পাশের দেশগুলো থেকে মাদক আসছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ কক্সবাজারের শাহপরী দ্বীপে অভিযান পরিচালনা করতে গেলে ইউনিফর্মের পাশাপাশি নিজস্ব অস্ত্রধারী ফোর্স থাকলে অনেকটা সুফল হতো। পাশাপাশি মাদকের চোরাচালন বন্ধে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। মাদক ব্যবসার সঙ্গে কক্সবাজারের একজন সংসদ সদস্য জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীকে আমরা অন্য কোনো চোখে দেখি না। তাদের অপরাধীর চোখেই দেখা হয়। এতে কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। ইয়াবা চোরাচালানের মূল রুট কক্সবাজারের টেকনাফে নতুন সার্কেল প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেই মাদক নির্মূল সম্ভব। অতিরিক্ত পরিচালক আমির হোসেন বলেন, শুধু মাদকের পেছনে প্রতি বছর দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। প্রণব কুমার বলেন, মাদকের অপব্যবহার রোধে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশে যতোটি বার ও ক্লাবের অনুমোদন ছিল, এ বছর তার চেয়ে বাড়ানো হয়নি। তিনি বলেন, মাদকের নিরস্ত্র কর্মকর্তারা এ বছর ১৫টি ক্ষুদ্রাস্ত্র উদ্ধার করেছে। অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) নজরুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে দিয়ে মাদকের চোরাচালান রোধে প্রতিবেশী দেশের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
সভায় মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে বলা হয়Ñ গত অক্টোবর পর্যন্ত চলতি বছরের ১০ মাসে মাদকদ্রব্য আইনে সারা দেশে ৯ হাজার ৬৪১টি মামলা দায়ের হয়। ওই সব মামলায় আসামি করা হয় ১০ হাজার ৩৫৪ জনকে। ওই সময়ে সারা দেশে উদ্ধার করা হয়েছে ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮৪টি ইয়াবা ট্যাবলেট। এ ছাড়া উদ্ধার হয় ২৩ হাজার ৬৪১ বোতল ফেনসিডিল, ৪ হাজার ১৫ কেজি গাঁজা। একই সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ১১ হাজার ৯৪৫টি অভিযানে ৬ হাজার ৪৬৯টি মামলা এবং ৬ হাজার ৭৮১ জনকে সাজা দেয়া হয়। ডিএনসির কর্মকর্তারা বলেন, অধিদপ্তরে চাহিদার তুলনায় কমসংখ্যক জনবল, যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকট, বাজেটের অপ্রতুলতা এবং নিজস্ব ভবন, অয়্যারলেস নেটওয়ার্ক, আধুনিক সরঞ্জাম ও ঝুঁকিভাতা না থাকায় অভিযান পরিচালনা করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাদকের মামলার জন্য একক কোনো আদালত নেই। এ জন্য মামলা নিষ্পত্তি হয় না। মামলার দ্রুত বিচার কাজ পরিচালনায় প্রত্যেক জেলায় বিশেষ আদালত থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা জানান, ২৫ টাকা মূল্যের পেথেড্রিন মিটফোর্ডের বাজারে বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। এই নেশাজাতীয় দ্রব্যের লাইসেন্স নেই। লাইসেন্স থাকলে মাদকের হিসাব থাকতো। আর মূল্যে নির্ধারণ করে দেয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ জন্য বিধি তৈরির চেষ্টা চলছে। এটা সময়ের ব্যাপার।