বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। একসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। এর পাশাপাশি ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান।
পাশাপাশি ছিল কুয়েত। কাছের দেশ মালয়েশিয়াও একসময় দেশের অভিবাসী কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও কাতারÑবাংলাদেশি কর্মীদের বড় এই তিনটি শ্রমবাজারে পাসপোর্ট জটিলতায় দেড় লাখ প্রবাসী অবৈধ হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। ছয় মাস অপেক্ষা করেও এই জটিলতা থেকে সমাধান মিলছে না।
বেশির ভাগ ভিসার মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। সময়মতো ভিসা নবায়ন করতে না পারলে গ্রেপ্তার ও জরিমানা গোনার শঙ্কা রয়েছে। পাসপোর্ট না পেলে অনেককে দেশেও ফিরতে হতে পারে।
খবরে প্রকাশ, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, সেখানে এ পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি প্রবাসী এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন।
এর মধ্যে ২৮ হাজার কর্মীর পাসপোর্ট ছাপার অপেক্ষায় রয়েছে। বাকি ১৪ হাজারের বেশি পাসপোর্ট এখনো প্রক্রিয়াধীন। সৌদি আরবে এক লাখের বেশি কর্মীর পাসপোর্ট আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৮৫ হাজারের বেশি কর্মীর পাসপোর্ট ছাপার অপেক্ষায় আটকে আছে। কাতারে ১০ হাজার কর্মীর পাসপোর্ট আবেদন জমা রয়েছে।
সময়মতো পাসপোর্ট না পেলে তিন দেশের দেড় লাখের বেশি কর্মীর অবৈধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীদের ক্ষেত্রে বাস্তবতা এই যে অনেক পুরনো বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন বাজার খুলছে না। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের দিক থেকে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। আর সে কারণেই আমাদের এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের রেমিট্যান্সযোদ্ধা, যারা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করছেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও কাতারÑএই তিন দেশের দূতাবাস বলছে, এমআরপির বুকলেট, লেমিনেশন ফয়েল পেপার ঘাটতি ও এমআরপির প্রিন্টিং মেশিনের যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট ছাপা হতে দেরি হচ্ছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পাসপোর্ট না থাকায় মালয়েশিয়ায় কেউ কেউ এরই মধ্যে অবৈধ হয়ে গেছেন। অনেকে আবার অবৈধ হওয়ার ঝুঁকিতে। সৌদি আরবে পাঁচ-ছয় মাস ধরে এমআরপি পাসপোর্টের জটিলতায় কারো ইকামা ও কারো ভিসা নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। অনেকে অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন। পাসপোর্ট নবায়ন জটিলতায় কাতারে বর্তমানে ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন। ভোগান্তি বাড়ছে রেসিডেন্সি নবায়নেও।
যাদের শ্রমে-ঘামে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, সেই কর্মীদের প্রবাসজীবন নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে। দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি বাড়াতে পারলে রেমিট্যান্সও বাড়বে। নতুন বাজারও খুঁজতে হবে।