সর্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু বাস্তব চিত্রটি হচ্ছে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। পার্থক্যটি এখন যেন খোলা চোখেই দৃশ্যমান। যেমন মেয়ে ও ছেলের পার্থক্য, ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য, গ্রাম ও শহরের পার্থক্য।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই ঝরে পড়ছে বেশি। সেভ দ্য চিলড্রেনসহ শিশুদের নিয়ে কাজ করা ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থার ২০২০ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪১ শতাংশ মেয়ে এবং ৩৩ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার নানা কারণ বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা বলছেন, মেয়েদের ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ বাল্যবিবাহ ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। অন্যদিকে শিক্ষা ব্যয় ও কর্মমুখী শিক্ষার অভাবেও শিক্ষার্থীরা ঝরে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারা ঝরে পড়ছে তা খুঁজে দেখা দরকার। আর সেখানেই উত্তরটা আছে। অতিদরিদ্র, বিশেষ করে নগরদরিদ্র অথবা ভাসমান জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী শিশুরা ঝরে পড়ছে। প্রতিবন্ধীদের স্কুলে আনা হলেও তারা টেকে না। দু-একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার হার ভালো। কিন্তু অন্যান্য জনগোষ্ঠীর অবস্থা খুবই খারাপ।
তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের পর্যাপ্ত স্কুল না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় পাস করার পর ঝরে পড়ছে বেশির ভাগ শিশু। এদের মধ্যে ছেলেরা নিয়োজিত হচ্ছে কৃষিকাজে, মেয়েরা শিকার হচ্ছে বাল্যবিবাহের। অতীতের বহু সমীক্ষায় দেখা গেছে, মেয়েদের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা। কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলও এই বাস্তবতার বাইরে নয়। কুড়িগ্রামের চরের শিশুদের লেখাপড়া করার অনেক ইচ্ছা থাকলেও আশপাশে হাই স্কুল না থাকায় বাধ্য হয়ে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করতে হয়। আর মেয়েদের বিয়ে হয় অল্প বয়সে। সরকারি পরিসংখ্যানে কুড়িগ্রাম জেলায় সাক্ষরতার হার ৬৫ শতাংশ হলেও চরাঞ্চলের শিক্ষার নিম্নহার লক্ষণীয়।
কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলে শিক্ষার এই হাল আমাদের মোটেও আশাবাদী করে না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটাই পথ, আর সেটি হচ্ছে উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। এটি করা না গেলে অন্তত কুড়িগ্রাম জেলায় শিক্ষার সর্বজনীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।