এক বছরে গাজায় হামাসের ৪০ হাজার স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল

3

কাজির বাজার ডেস্ক

অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে রোববার। দীর্ঘ এ সময়ে উপত্যাকাটিতে ক্রমাগত বেড়েছে নিহতের সংখ্যা। এক বছর পেরিয়ে গেলেও থামছেই না মৃত্যুর মিছিল।
ইসরাইলের মুহুর্মুহু হামলায় ধসে পড়েছে বহু ভবন। একেবারে ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হয়েছে পুরো গাজা। খাবার নেই। পানি নেই। নিরাপদ কোনো আশ্রয়ও নেই। সব মিলিয়ে তীব্র মানবিক সংকটে দিশেহারায় দিন গুনছে গাজার বাসিন্দারা।
ইসরাইলের গুলি আর ক্ষুধার ভয় ছাড়াও মহামারি আতঙ্কেও দিন কাটাচ্ছে তারা। বিপদে জর্জরিত গাজার চারদিকে শুধুই হাহাকার। তবুও যুদ্ধ থামার কোনো নাম নেই।
এক বছরে গাজায় হামাসের ৪০ হাজারের বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সোমবার দখলদার দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এই সময়ে হামাসের ৪ হাজার ৭০০টি টানেলের মুখ খুঁজে পেয়েছে তারা। ধ্বংস করেছে এক হাজারটি রকেট লঞ্চার সাইট। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, এই এক বছরে তারা গাজায় হামাসের ৮ জন ব্রিগেড কমান্ডার, ৩০ জন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এবং ১৬৫ জন কোম্পানি কমান্ডারকে হত্যা করেছে।
সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা লেবাননে হামলা চালিয়ে ৮০০ এর বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। এছাড়া ৪ হাজার ৯০০ লক্ষ্যবস্তুতে আকাশ থেকে এবং প্রায় ৬ হাজারের বেশি লক্ষ্যবস্তুতে স্থল অভিযান চালিয়েছে। পশ্চিম তীর ও জর্ডান উপত্যকা থেকে ৫ হাজারের বেশি সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে ইসরাইলি বাহিনী।
ইসরাইলি সেনাদের হতাহতের সংখ্যাও প্রকাশ করেছে তেল আবিব। জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ৭২৬ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ৩৮০ সেনা ও গত ২৭ অক্টোবর ৩৪৬ সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া তাদের ৪ হাজার ৫৭৬ জন সেনা আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ সেনা অপারেশনাল দুর্ঘটনার মারা গেছে, যা সামরিক বাহিনী উল্লেখ করেনি।
ইসরাইলের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৩ লাখ রিজার্ভ সেনা মোতায়েন করেছে সামরিক বাহিনী। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ পুরুষ এবং ১৮ শতাংশ নারী। এই সেনাদের বেশিরভাগের বয়স ২০ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হাতে অন্তত ৪১ হাজার ৮৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া হামলায় ধসে পড়া ভবন ও ধ্বংসস্ত‚পের নিচে আরও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। তারা সবাই নিহত হয়েছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
নিহতদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। এছাড়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৯৭ হাজার হাজার ১৬৬ জন আহত হয়েছেন। ইসরাইলি হামলায় প্রতিদিনই শত শত মানুষ হতাহত হচ্ছে।
শুরু থেকেই ইসরাইলি হামলার প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে ছোট এই উপত্যকার বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে গাজার বিভিন্ন জরুরি স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে থাকে ইসরাইলি সেনারা। ইসরাইলি এই ধ্বংসযজ্ঞ এতই ভয়াবহ হয়ে উঠে যে যুদ্ধের মাত্র চার মাসে প্রায় সাড়ে ১৮ বিলিয়ন বা এক হাজার ৮৫০ কোটি ডলারের অবকাঠামো হারিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজার ৬৬ শতাংশ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় আগস্ট পর্যন্ত ২০০ সরকারি ভবন, ১২২টি বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হয়েছে।