সীমান্তে অবৈধ চোরাচালান ও পাথরখেকো এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় কোম্পানীগঞ্জে বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্রদের মামলা ও গ্রেপ্তার করে সাবেক ওসি এবং যুবদল নেতারা হয়রানি করছেন। বৃহস্পতিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন কোম্পানীগঞ্জে বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলার বুড়দেও গ্রামের আব্দুল হান্নানের পুত্র শাহজাহান আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জুলাইয়ের ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনের সময় সারাদেশের মতো কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়ও আমরা গণ-আন্দোলন গড়ে তুলি। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের দাবিতে একদফা আন্দোলনে আমরা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সব ছাত্র-জনতাকে নিয়ে রাজপথে নামি। এরই ধারাবাহিকতায় বিজয় পরবর্তী সময়ে আমরা কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে মিলে উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে ভারতীয় মাদক, চোরাচালান, চিনি, বিড়ি ইত্যাদি অনুপ্রবেশে বাধা প্রদান, ধরিয়ে দেওয়া এবং সাদাপাথর পর্যটন স্পটসহ সব উৎস থেকে অবৈধভাবে বালু, পাথর, লুটপাট ও চাঁদাবাজি বন্ধে সোচ্চার হই। এ কারণে আমরা পাথর ও বালুখেকো এবং মাদক ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াই। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আমাদের কয়েকজন আন্দোলনকারীর সঙ্গে তৎকালীন ওসি মো. বদিউজ্জামান ও পূর্বপাড়ের কিছু যুবদল নেতা এসব বিষয়ে আমাদের শাঁসাতে এলে তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। ওসি ও কতিপয় চোরাকারবারী, লুটপাটকারী নেতারা আমাদের চ্যালেঞ্জ করেন এবং হুমকি দেন আমরা যেনো গত রাতের শারফিনের পাথর লুটে বাধা দেওয়ার মতো কাজ আর না করি; এবং এসব বিষয়ে প্রতিবাদ না করার জন্য আমাদেরকে তথাকথিত চাঁদাবাজরা মোটা অংকের টাকা প্রদানের অফারও করে, আমরা তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয়। পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে বালুভর্তি ট্রাক্টর যাচ্ছে দেখে চালককে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, কলাবাড়ী ব্রিজের নিচ থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ভাতিজা আদনান ও আমাদের এক সহযোদ্ধা আসাদুজ্জামান রুবেলের নেতৃত্বে বালু আনছে। এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান রুবেলকে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাই এবং তাৎক্ষনিক আমরা ১৫-১৬ জন মোটরসাইকেলযোগে কলাবাড়ী ব্রিজের পূর্বপারে যাই এবং সেখানে আদনান ও রুবেলকে ব্রিজের মুখে পাই। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা তা সরাসরি অস্বীকার করে। এ সময় তারা জানায়, দয়ার বাজার এলাকায় যুবদল নেতা বাহার আহমদ রুহেল গংদের নেতৃত্বে প্রায় ১৫-১৬ টি ট্রলি সাদাপাথর এলাকায় পাথর লোড করা হচ্ছে এবং ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বাহার উদ্দিনের ভাই জুবায়ের, কামাল হাজীর ছেলে হাসনাত এবং হাফিজুরসহ আরও কয়েকজন ওই গাড়ি ও নৌকা থেকে চাঁদা তুলছে। আমরা যদি তাদের হাতেনাতে ধরতে চাই, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে যেনো ঘটনাস্থলে যাই। এরপর আমরা আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রæপে এ বিষয় জানাতে চাইলে আসাদুজ্জামান রুবেল ও আদনান আমাদেরকে জানায় যে, যেহেতু গ্রæপে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৬৫০ এর ওপরে সদস্য আছেন, তাই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রæপে জানালে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে চাঁদাবাজরা পালিয়ে যাবে, তাই যেন গ্রæপে এ বিষয়ে কিছু বলা না হয়।’
তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা তৎক্ষণাৎ কোম্পানীগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামানকে বিষয়টি অবহিত করি এবং আমরা উপস্থিত কয়েকজন আন্দোলনকারী ছাত্র ও সাধারণ লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং ওই খবরদাতা দুজনকেও সঙ্গে চলতে বললে তারা আমাদেরকে বলে যে, আমরা এলাকার লোকাল, সবার চেনাজানা লোক। আমরা প্রথমে সামনে থাকলে আমাদের সমস্যা হবে, তাই আপনারা যান, আমরা আপনাদের পিছনে পিছনে আসছি। তারা আমাদেরকে কোথায় যেতে হবে সেটাও বলে দেন। আমরা দয়ারবাজার মাঠের পূর্বে নদীর পারে গিয়ে পৌঁছাই এবং দেখতে পাই বেশ কিছু নৌকা হতে ট্রলি গাড়িতে পাথর তোলা হচ্ছে এবং সেখানে বাহারের ছোটভাই জুবায়ের, তারই আরেক ছোট ভাই নাজিম, কামাল হাজীর ছেলে হাসনাত, হাফিজুর ও আরও ৪-৫ জন দাড়িয়ে এসব পাথর চুরির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তখন আমরা বারকি নৌকার শ্রমিকদের জিজ্ঞেস করি আপনাদের কাছে থেকে কি কেউ ছাত্র সমন্বয়ক দাবি করে চাঁদা তুলছে? তখন কথিত চাঁদাবাজরা সামনের লোকদের ইশারা দিয়ে শ্রমিকদেরকে বিষয়টি প্রকাশ না করার ইঙ্গিত দেয়। ওই মুহ‚র্তে, বাহারের ছোটভাই জুবায়ের, তারই আরেক ছোটভাই নাজিম, কামাল হাজীর ছেলে হাসনাত, হাফিজুর ও আরও ৪-৫ জন আমাদের কাছে এখানে আসার উদ্দেশ্য জানতে চায়। আমরা চাঁদাবাজদের ধরিয়ে দিতে এসেছি শুনে তারা অতর্কিতভাবে আমাদের কয়েকজনের ওপর দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা করে। এ সময় উপস্থিত কয়েকজন লোক মধ্যস্থতা করে বলেন, আপনারা সবাই বাজারে চলেন। আমরা আপনাদের বিষয়টা মিটমাট করার ব্যবস্থা করছি।’
পরবর্তীতে তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী যুবদল নেতা বাহার ও তার সঙ্গী চাঁদাবাজদের গোপন ফোন কলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনটি ভ্যানসহ পুলিশ চলে আসে। পুলিশ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে বসিয়ে রাখা লোকগুলো পুলিশকে জানায় আমরা নাকি তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেছি। এ সময় তৎকালীন ওসি বদিউজ্জামান বলেন, এখানে যেহেতু একটা গোলমাল হয়েছে, সুতরাং তোমরা সবাই আমাদের সঙ্গে থানায় চলো, সেখানে যাওয়ার পরে তোমরা যার যার মত চলে যাবে। আমরা ওসির কথায় বিশ্বাস করে তাদের গাড়িতে উঠি। আমরা থানায় আসার প্রায় ২ ঘন্টা পরে ওসি থানায় পৌঁছান। এর আগে তিনি ওই ২ ঘণ্টা চাঁদাবাজ ও চক্রান্তকারীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। উনি থানায় আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অভিভাবকরা ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে থানায় এসে আমাদেরকে আটকের কারণ জানতে চান। শেষে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের প্রমাণ না থাকায় ছেড়ে দিতে বলেন। তখন ওসি বলেন, বাহার ও রজন আসলে ছেড়ে দেওয়া হবে। রাত তখন সাড়ে ৩টা বাজে। তবুও আমাদের অভিভাবকরা বাহার, রজন ও অভিযোগকারী সবাইকে নিয়ে থানায় আসেন। সবাই আমাদেকে ছেড়ে দিতে বললেও ওসি নানা কারণ দেখিয়ে বিলম্ব করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আমাদেরকে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, পরে কয়েকটি গণমাধ্যমে ভুয়া তথ্য দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করানো হয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পাড়ুয়া গ্রামের মরহুম আব্দুল হকের পুত্র আরিফ হাসান জুবায়ের, নয়াগাংগের পার গ্রামের ইলিয়াছুর রহমানের পুত্র হাবিবুর রহমান মামুন, কামালবস্তী গ্রামের শামছুল ইসলামের পুত্র সুহেল আহমদ রানা, টুকেরবাজার গ্রামের আনোয়ার হোসেনের পুত্র মো. রাজন মিয়া, ডাকঘর গ্রামের আব্দুল বাছেতের পুত্র দিলোয়ার হোসেন দিদার, কাঠালবাড়ী গ্রামের বাহার আহমদের পুত্র মো. সেলিম মিয়া, বুড়দেও গ্রামের রশিদ আলীর পুত্র আবু সাঈদ রবিন, বটেরতল গ্রামের সাইফুল ইসলামের পুত্র নাসির হুসেন, বাহাদুরপুর গ্রামের কালু ভ‚ইয়ার পুত্র সুলেমান আহমদ ও জালিয়ারপার গ্রামের হাইদুল ইসলামের পুত্র রফিকুল ইসলাম।