শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বøু-বার্ডসহ ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ

13

স্টাফ রিপোর্টার
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সিলেট নগরীর মিরের ময়দানে বøু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজসহ ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া অপর ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। রবিবারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব ঘটনা ঘটে।
বøু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-আন্দোলনের মুখে সিলেট নগরীর মিরের ময়দানে স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বøু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হুসনেআরা বেগম পদত্যাগ করেছেন। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। কয়েক দিন ধরে বøু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করে আসছেন। রবিবার সকাল থেকে তার প্রকট আকার ধারন করে। সকাল থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা অধ্যক্ষকে তাঁর কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে বাধ্য হয়ে হুসনেআরা বেগম অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি নেন।
এদিকে, ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে বøু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজের অংকের শিক্ষক দীপক চৌধুরী বুলবুল ক্যাম্পাস থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যান। এসময় কিছু শিক্ষার্থী মারমুখি হলে অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে আগলে রিকশায় তুলে দেন।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য- অধ্যক্ষ হুসনেআরা বেগম ও শিক্ষক দীপক চৌধুরী বুলবুল আওয়ামী লীগ-পন্থী এবং তারা নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। তাই পরিস্থিতি বদলে যাওয়া এখন আর তারা এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকতে পারবেন না।
কিশোরী মোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়: নগরীর নয়াসড়কস্থ কিশোরী মোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌরা ঘোষের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রীরা গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করছেন। রবিবার ছাত্রীদের আন্দোলন তুমুল হয় এবং তাদের তোপের মুখে পড়ে একপর্যায়ে অফিস থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর, ছাত্রীদের অভিভাবক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বসে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। মঙ্গলবারের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা যায়, রবিবার সকাল থেকেই কিশোরী মোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অপসরাণসহ বিভিন্ন দাবিতে ছাত্রীদের তুমুল আন্দোলন শুরু হয়। তারা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ ঘেরাও করে বিভিন্ন সেøাগান দেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তোপের মুখে প্রধান শিক্ষক গৌরা ঘোষ তার কার্যালয় ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে যান।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন- প্রধান শিক্ষক গৌরা ঘোষ আডি কার্ড ও ডায়রি নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করছেন। এছাড়া ২০১৯ সালে এক ছাত্রীর সাথে অশালীন আচরণের কারণে ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এতে এলাকাবাসী ক্ষীপ্ত হয়ে তাকে মারার প্রস্তুতি নিলে শালীসের মাধ্যমে ১ লক্ষ টাকায় জরিমা করে মিমাংসা করা হয়। কিন্তু তিনি জরিমানার টাকা নিজ তহবিল থেকে না দিয়ে বিদ্যালয়ের তহবিল হতে পরিশোধ করেন। তিনি তার অনুগত শিক্ষকদের নিয়ে বিদ্যালয়ে আয়নাঘর নামে পরিচিত একটি কক্ষে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আড্ডা দেন। প্রধান শিক্ষকের দুর্ব্যবহার, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে দিন দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষক নিয়ম বহির্ভুত ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন দিয়ে তার অনুগত সভাপতি নিয়োগ করে ভাউচার বাণিজ্য করেন। এতে বিদ্যালয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক পরিমাণ অর্থ কেলেঙ্কারি নিয়ে ২০১৯ সালে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করার পরও প্রধান শিক্ষক অর্থের বিনিময় সঠিক তদন্ত করতে দেননি। এসব কারণে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
ঢাকাদক্ষিণ সরকারি কলেজ: গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এরশাদ আলী পদত্যাগ করেছেন। রবিবার সকালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এ পদত্যাগ করেন তিনি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, গত ১ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এরশাদ আলী কলেজে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সভা করেছেন। এ ছাড়াও অধ্যক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে পোস্ট করেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ এরশাদ আলীর পদত্যাগ দাবি করেন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে কলেজ ত্যাগ করেন। অধ্যক্ষ এরশাদ আলী ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছিলেন।
পদত্যাগের বিষয় নিশ্চিত করেছেন কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রহীম। তিনি বলেন, আমরা সব শিক্ষক অধ্যক্ষকে সভা করতে নিষেধ করেছিলাম। তিনি আমাদের কারো কথা না শুনে উনার খেয়াল খুশিমতো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সভা করেছিলেন।
হবিগঞ্জ বামৈ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়: নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বামৈ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশীদ চৌধুরীর পদত্যাগ দাবী করেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবী করে রবিবার সকাল ১১টার দিকে স্কুল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে তারা লাখাই বামৈ সড়ক অবরোধ করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এসময় সড়কের দু’পাশে আটকা পড়ে অনেক যানবাহন। তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষদের। খবর পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনে।
জানা গেছে, বামৈ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশীদ চৌধুরী এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নানা অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠে। মাসুক মিয়া নামে এক ভোক্তভুগির শিক্ষার্থীর পিতা সম্প্রতি বিধিমালা বহিভর্‚ত টাকা দাবীর অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। গত ১৫ জুলাই লিখিত অভিযোগটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর দায়ের করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবীতে মাঠে নামেন শিক্ষার্থীরা। স্কুল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভের পর তারা লাখাই বামৈ সড়ক অবরোধ করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
অভিযোগের বিষয়ে বার বার ফোন দিলেও বামৈ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা সুলতানা জানান, পুর্বের অভিযোগের বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে এবং শিক্ষার্থীদের দাবীর বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।