চাঁদাবাজির মামলা : তিন ভাইসহ ৪ জনের ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড

9

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটের বিশ্বনাথে একটি চাঁদাবাজী মামলায় একই পরিবারের ৩ ভাইসহ ৪ জনের ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ের পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রমে কারাদ দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার (২০ আগষ্ট) দুপুরে সিলেটের দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও বিশেষ দায়রা জজ আদালতের বিচারক স্বপন কুমার সরকার এ রায় প্রদান করেন। ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. জয়নাল আবেদীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছেন- সিলেটের বিশ্বনাথ থানার বেতসান্দি এলাকার পিঠাকরা গ্রামের মৃত সিকন্দর আলীর ছেলে ইলিয়াছ আলী আল হোমাইদী (৪৫), তার সহোদর ভাই আলকাছ আলী (৫০), মোহাম্মদ আলী (৩০) ও একই এলাকার জাহির আলীর ছেলে আয়না মিয়া (৫০)। রায় ঘোষনার সময় দ প্রাপ্ত আসামী ইলিয়াছ আলী আল হোমাইদী, আলকাছ আলী ও মোহাম্মদ আলী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত থাকলেও অপর আসামী আয়না মিয়া পলাতক ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বেতসান্দি এলাকার পিঠাকরা গ্রামের মৃত আব্দুল মুতলিব এর ছেলে মো. আক্তার হোসেন এক জন সৎ, শিক্ষিত, শান্তিপ্রিয় ও ধর্মপ্রাণ লোক হিসেবে এলাকায় বসবাস করে আসছেন। এছাড়া তিনি হজরত শাহজালাল (র) এর অন্যতম আউলিয়া শাহ সুনামদি মাজার শরীফের মোতাওয়াল্লী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তাঁদের পূর্বপুরুষগণও এই মাজার শরীফের মোতাওয়াল্লী হিসেবে বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে মাজারের রক্ষনাবেক্ষন, উন্নতি, ওয়াজ মাহফিল ও বাৎসরিক ওরস মাহফিলের করে আসছিলেন। এমতাবস্থায় মাজার বিদ্ধেসী, পরধনলোভী, ও চাঁদাবাজ প্রকৃতির লোকজন মাজারের টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে। যুগ যুগ ধরে প্রতি বৎসর পৌষ মাসের ২০তারিখ মাজার প্রাঙণে এক বিরাট ওরস মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব নির্ধারিত ওরস সফল করার জন্য আগামী প্রস্তুতি হিসেবে ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর ওরস প্রাঙনে ওইদিন বিকেলে মো. আক্তার হোসেন ওরস পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সমবেত হলে আসামী ইলিয়াস আলী হোমাইদী, আলকাছ আলী, মোহাম্মদ আলী, জহির আলী ও আয়না মিয়া পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মাজার প্রাঙনে প্রবেশ করে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। প্রতি বৎসর ২ লক্ষ টাকা চাঁদা না দিলে ওরসের কার্যক্রম চালাতে পারবেনা। এ সময় মো. আক্তার হোসেনের চিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে আসলে চাঁদাবাজরা পূর্ণরায় আসবে বলে জানিয়ে যায়। এছাড়াও চাঁদা না দিলে হত্যার হুমকিও প্রদান করে তারা।
পরবর্তীতে এ ঘটনায় মো. আক্তার হোসেন বাদি হয়ে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গা করা ও চাঁদা দাবীর অপরাধে এনে ৫ জনের বিরুদ্ধে সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং- ৩ দাখিল করেন। যার সিআর মামলার নং-৩৫২/২০১৯। পরবর্তীতে আদালতের আদেশক্রমে উক্ত মামলাটি বিশ্বনাথ থানায় নথিভ‚ক্ত হয়। যার মামলার নং- ৫ (০৩-১১-২০১৯), জিআর-২৩৫/১৯ ও দায়রা ৭২৭/২২। এর মধ্যে মামলা চলাকালীন সময়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামী আয়না মিয়ার পিতা জাহির আলী মৃত্যুবরণ করেন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ২৯ জুন সিলেট জেলা পিবিআই’র সাব-ইন্সপেক্টর (নি:) মো. শাহ ফজলে আজিম পাটোয়ারী ৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং- ১৫০) দাখিল করেন এবং ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রæয়ারী ৪ আসামীর বিরুদ্ধে চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে আদালত এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল মঙ্গলবার আদালত আসামী ইলিয়াছ আলী আল হোমাইদী, তার ভাই আলকাছ আলী, মোহাম্মদ আলী ও আয়না মিয়াকে পেনাল কোডের ৩৮৫ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে ৫ বছরের সশ্রম কারাদ ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ মাসে বিনাশ্রমে কারাদ দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সাওয়ার হোসেন আবদাল ও আসামীপক্ষে অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল লতিফ মামলাটি পরিচালনা করেন।