সিডরের পর বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ¡াস রিমালে

17

কাজির বাজার ডেস্ক

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল যখন উপক‚ল অতিক্রম করেছিল, তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতিতে উপক‚ল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড়টি। অন্যদিকে ২০০৭ সালে সিডর-পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে রিমালের জলোচ্ছ¡াসের উচ্চতা ছিল বেশি। এ কারণে রিমালে দেশের ১৯ জেলার ৩৭ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রিমালের প্রভাবে মঙ্গলবারও সারা দেশের কোথাও গুঁড়িগুঁড়ি আবার কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের অগ্রভাগ রবিবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে উপক‚ল অতিক্রম করতে শুরু করে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র অতিক্রম শুরু করে মধ্যরাত নাগাদ। সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রম করতে আরও ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় নেয়। উপক‚ল অতিক্রমের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় একটির সঙ্গে অন্যটির পার্থক্য থাকে। প্রতিটি সাইক্লোন বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে। একটির সঙ্গে অন্যটির মিলবে না। সাইক্লোনে যখন বাতাসের গতি কম থাকে, তখন এটি ধীর হয়ে যায়। রিমালের যেহেতু বাতাসের স্পিড কম ছিল, সে কারণে বেশি সময় থেকেছে। আমরা বলেছি বাতাসের গতি ১২০ কিলোমিটারের বেশি হবে না।’ জলোচ্ছ¡াসের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো মাঠপর্যায় থেকে তথ্য পাইনি। যত দূর জানলাম প্রচুর পানি হয়েছে।’ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল আলম খান বলেন, ‘আমাদের কাছে সারা দেশের তথ্য এখনো আসেনি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে যেটি জানতে পেরেছি ৭ থেকে ১০ ফুট বা তার বেশি উচ্চতার জোয়ার হয়েছে।’ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। জলোচ্ছ¡াসের উচ্চতা ছিল ১৫ থেকে ২০ ফুট। এর পরবর্তী আইলার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার আর জলোচ্ছ¡াস ছিল ৪-৬ ফুট। এরপর কোমেনের সময় ছিল বাতাসের গতিবেগ ৬৫ কিলোমিটার। আর জলোচ্ছ¡াসের উচ্চতা ছিল ৫-৭ ফুট। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মে মাসে হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে ভয়ংকর ছিল ১৯৬৩ সালের ২৮ মে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপক‚লে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ২০৯ কিলোমিটার। আর জলোচ্ছ¡াসের উচ্চতা ছিল ৮-১২ ফুট।
ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে: প্রতিমন্ত্রী : ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, রিমালে ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়নের ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।
তিনি বলেন, দুর্যোগকবলিত মানুষের সাহায্যে আমরা এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের অনুক‚লে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। সব মন্ত্রণালয় যার যার জায়গা থেকে কাজ করছে। এখন দুর্যোগ-পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘রিমাল বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় ঘূর্ণিঝড়। এ কারণে আমরা গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এই দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি ও ত্রাণের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করব।’