দীর্ঘ আড়াই বছরে পাঁচ হাজার শিশুযতœ কেন্দ্রের একটিও চালু হয়নি

6

কাজির বাজার ডেস্ক
শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাঁচ হাজার শিশুযতœ কেন্দ্র প্রকল্পের একটি কেন্দ্রও চালু হয়নি প্রায় আড়াই বছরে। প্রকল্পটির সাঁতার সুবিধা কেন্দ্রেরও একই অবস্থা। অথচ খরচ হয়ে গেছে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা।
প্রকল্পের বাকি ৩ হাজার কেন্দ্র বেসরকারি। এগুলোর কার্যক্রমও প্রকল্পের আওতায় পুরো শুরু করা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হলেও এর উদ্দেশ্য পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ জন্য প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অদক্ষতা এবং দূরদর্শিতার অভাবকে দায়ী করেছেন। প্রকল্পটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ‘এটা আড়াই বছর আগের প্রকল্প। এখনই এটা নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। দেখে বলতে হবে।’
সূত্র জানায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ‘সমাজভিত্তিক শিশুযতœ কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান প্রকল্প’ নেয়। এই প্রকল্পে ১৬ জেলার ৪৫ উপজেলায় ৮ হাজার শিশুযতœ কেন্দ্র পরিচালিত হবে। এগুলোর মধ্যে নতুন হবে ৫ হাজার; বাকি ৩ হাজার কেন্দ্র বেসরকারি উন্নয়ন-সহযোগীদের মাধ্যমে আগে থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো প্রকল্পের সঙ্গে একীভ‚ত হওয়ার কথা। কেন্দ্রগুলোতে তিন বছরে ১ থেকে ৫ বছর বয়সী ২ লাখ শিশুকে সেবা প্রদান এবং ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী ৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২১৭ কোটি ৬১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা দেবে সরকার এবং ৫৪ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা দেবে উন্নয়ন-সহযোগীরা।
ব্যয়ের ৮৩ দশমিক ৮০ শতাংশই খরচ হবে ৮ হাজার শিশুযতœ কেন্দ্র পরিচালনায়। তবে কেন্দ্রের জমি ও সুবিধা এলাকাবাসীর কাছ থেকে বিনা মূল্যে নেওয়া হবে বলে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় রাখা হয়নি। প্রতি কেন্দ্রে দুজন যতœকারী প্রতিদিন পাঁচ ঘণ্টার জন্য পারিশ্রমিক পাবেন। যেখানে বিনা মূল্যে উপযুক্ত স্থান পাওয়া যাবে না, সেখানে স্থাপনা ভাড়া করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। সহযোগিতা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বøুমবার্গ ফিলানথ্রপিস এবং যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউট।
প্রতি কেন্দ্রে দুজন করে ৮ হাজার কেন্দ্রে মোট ১৬ হাজার নারীর কর্মসংস্থান হওয়ার কথা। এর মধ্যে ৫ হাজার কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় ১০ হাজার জনের নিয়োগ হয়নি। আগে থেকে পরিচালিত বেসরকারি ৩ হাজার কেন্দ্রেও ৬ হাজার কর্মী নিয়োগ পুরো শেষ হয়নি। প্রকল্পের অগ্রগতি জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজীর লিটন প্রকল্পের কর্মসূচি ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কর্মসূচি ব্যবস্থাপক তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তড়িঘড়ি কিছু করে শিশুদের ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না। তাই সময় নিয়ে প্রারম্ভিক কাজ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প বলে শুরুতে পরিকল্পনায় অনেকটা সময় লেগেছে। মন্ত্রণালয়ের আদেশ পেতেও কিছুটা দেরি হয়েছে। প্রকল্পের জন্য জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তিন বছর যথেষ্ট সময় নয়। তিনি জানান, প্রকল্পের জন্য এখন পর্যন্ত ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
১ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে প্রকল্পের আরেকটি অংশ সাঁতার প্রশিক্ষণ। শিশুযতœ কেন্দ্রের আশপাশের জলাশয়ে শিশুদের সাঁতার শেখানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু সাঁতার শেখানোর জলাশয়ই এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। দেশে ১ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ পানিতে ডুবে। তথ্যমতে, গত ৯ থেকে ১৫ এপ্রিল সাত দিনে ২০ শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের মূল অংশ শিশুযতœ কেন্দ্র। সাঁতার প্রশিক্ষণে ব্যয় হবে মোট বরাদ্দের মাত্র ৩ শতাংশ। জলাশয় নির্ধারণ করতে একটু সময় লাগছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতিটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ২৫ শিশু ভর্তি হবে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কেন্দ্রে তাদের প্রারম্ভিক বিকাশে সহায়ক শিক্ষা ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম চলবে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকার ২ লাখ মা-বাবাকে সচেতন করা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হলেও এই সময়ের মধ্যে ২ লাখ শিশুকে সেবাদান এবং ৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানো সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রকল্পের মূল ধারণা কতটা বাস্তবসম্মত, সেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কোনো ব্যক্তির বাড়িতে শিশুযতœ কেন্দ্র করা কতটা বাস্তবসম্মত? বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে হচ্ছে। যে কারণে গ্রাউন্ড ওয়ার্কের নামে ফেলে রাখা হচ্ছে। এটাই দীর্ঘসূত্রতার জন্য দায়ী।