‘আমি ভয় পাচ্ছি, মানুষ খাবারের অভাবে মারা যাবে’

12

কাজির বাজার ডেস্ক

গাজা উপত্যকায় নিয়মিত চলছে দখলদার ইসরাইলের ভয়াবহতা। প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন অনেক মানুষ। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে খাদ্যের অভাব। ক্ষুধার জ্বালায় আত্মচিৎকার করছে হাজার হাজার শিশু। উদ্বাস্তুদের জন্য নিয়মিত খাবার তৈরির কাজ করেন বাকের আল-নাজি। কিন্তু তার মন ভেঙে যায় তখনই, যখন তিনি দেখতে পান তার তৈরি খাবার অভুক্ত শিশুদের ক্ষুধা মেটাতে পারছে না। আমি ভয় পাচ্ছি, মানুষ খাবারের অভাবে মারা যাবে। ইসরাইলের হামলায় ২৮ বছর বয়সি আল-নাজি গাজা শহর থেকে বাড়িঘর হারিয়ে এখন অবস্থান করছেন রাফাহ সীমান্তে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় এ এলাকায় এখন তিনি তার মতো বাড়িঘর হারানো মানুষের জন্য স্বেচ্ছায় খাবার রান্নার কাজ করছেন।
আল-নাজি জানান, রাফাহর তেকিয়ে আশ্রয় শিবিরে সামান্য খাবারের জন্য এখন হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন মুহ‚র্ত হলো হাতে হাতে খাবার বিতরণের সময়টি। আমার বুকে খুব যন্ত্রণা হয় যখন খাবার শেষ হয়ে যায়, আর শিশুরা বলতে থাকে তাদের পেট ভরেনি।’ এ অবস্থায় বেশিরভাগ স্বেচ্ছাসেবীই তাদের নিজেদের খাবারগুলো শিশুদের দিয়ে দেয়। জাতিসংঘের ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসির দেওয়া তথ্য অনুসারে, ডিসেম্বর শুরুর পর থেকে ২০ লাখ গাজাবাসী খাবারের তীব্র সংকটে পড়েছে। এদের মধ্যে তিন লাখ ৭৮ হাজার মানুষ ‘সর্বনাশা ক্ষুধায়’ দিন-রাত পার করছে।
গত বৃহস্পতিবার আইপিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, গাজার অধিবাসীরা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখে রয়েছেন এবং এই সংকট দিনের পর দিন বাড়ছেই। আর আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গাজার সব অধিবাসী তীব্র খাদ্য অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। অবরুদ্ধ উপক‚লীয় ভ‚খÐ গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্য পাঠানোর পরিমাণ ক্রমেই কমে আসছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ ও স্থলপথে হামলার কারণে নতুন করে সাহায্য পণ্যও পাঠানো যাচ্ছে না।
রাফাহ এলাকায় দেখা যায়, লোকজন বড় বড় পাতিলে ধোঁয়া ওঠা খাবার সামনে বেষ্টনীর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। পূর্ণ বয়স্ক মানুষ আর অনেক শিশু প্লাস্টিকের থালাবাটি হাতে অপেক্ষা করছে খাবারের জন্য।
প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষের জন্য খাবার সরবরাহ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য খালেদ শেখ আল-ইদ বলেন, ‘বাজার থেকে মসুর ডাল আর গমের আটা উধাও হয়ে গেছে। পাশাপাশি মটরশুটি আর শিমও পাওয়া যাচ্ছে না।’ তার কেন্দ্রটি কিছু দাতব্য সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবীদের দানে কোনোমতে চলছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে আল-নাজি বলেন, ‘যুদ্ধের আগে থেকেই এসব মানুষ গরিব ছিলেন। নিজেদের বাচ্চা-কাচ্চার খাবার জোগাতে যারা দিনরাত পরিশ্রম করতেন, তারা এখন কীভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াবে? আমি ভয় পাচ্ছি, মানুষ খাবারের অভাবে মারা যাবে।’
রাফাহ এলাকায় খাবার বিতরণের অনেক আগে থেকেই একটি কেন্দ্রে অপেক্ষা করছিলেন খান ইউনিস থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্তা নূর বারবাখ। তিনি বলেন, ‘আমি খাবার পাচ্ছি না। আমার বাচ্চাদের ওজন কমে গেছে। রাতের বেলায় ক্ষুধায় তাদের ঘুম ভেঙে যায়।’
যুদ্ধ চলতে থাকলেও খান ইউনিসে ফেরার জন্য চিন্তা-ভাবনা করছেন এমনটা জানিয়ে নূর বলেন, ‘ক্ষুধায় মরার চেয়ে নিজের ভিটেমাটিতে শহিদ হওয়া অনেক ভালো।’