দুদকের ভেতরে ষড়যন্ত্রকারীরা আগেও ছিল, এখনও আছে : রাষ্ট্রপতি

10

কাজির বাজার ডেস্ক
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘দুর্নীতিবাজদের কোনো দল নেই। তারা যে দলেরই হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। শনিবার আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকার সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুদকের ভেতরে ষড়যন্ত্রকারীরা আগেও ছিল, এখনও আছে। বিদেশি চক্রের বাইরেও পদ্মাসেতু দুর্নীতি মামলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল দুদকের ভেতর থেকেও। তারা সবাই মিলে পদ্মাসেতুর দুর্নীতির মামলা ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু স্বাধীন কমিশনের স্বাধীন তদন্তের কারণে সেদিন রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি অক্ষুণœ থাকে। শেষ পর্যন্ত অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাককে নাকে খত দিয়ে বিদায় নিতে হয়েছে।’ পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির বিষয়ে সে সময় বিশ্বব্যাংকের কোনো সমঝোতা প্রস্তাব বা বৈশ্বিক চাপের কাছে মাথানত করেনি দুদক। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে পেরেছিল দুদক। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘পদ্মাসেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে। দুদককে এ নিয়ে তদন্ত করতে চাপ প্রয়োগ করেছিল বিশ্বব্যাংক।’
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে সরকারের উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে কোনো অভিযোগ উত্থাপন হয়নি। এটা সরকারের সাফল্য, সরকারের কর্মকর্তাদের সাফল্য। দুর্নীতি দমনে সরকারের জিরো টলারেন্স রয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার।’
দুর্নীতিকে প্রান্তিক উন্নয়নের সবচেয়ে বড় বাধা উল্লেখ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি যথাযথভাবে কার্যকর করা গেলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা আরও গতি পাবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আসুন উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ করি। বর্তমান বাস্তবতায় দুদকের সামনে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এ কারণে দুদককে দুর্নীতি দমন ও নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় মামলা মোকাদ্দোমা না করে সার্ভিল্যান্স, ইনভেস্টিগেশন এবং মামলা পরিচালনা ও রেকর্ড ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।’
দুদককে নিজস্ব আলাদা প্রসিকিউশন ইউনিট করার তাগিদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি হলে আদালতে দুদকে মামলা দ্রæত নিষ্পত্তি হবে। কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা সর্বোচ্চ সততার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘অভাবে নয় লোভের কারণে মানুষ দুর্নীতি করে। একসময়ে দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হতো। দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না, এটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।’
দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে সরকারের অন্যান্য সংস্থার মতই দুদক কাজ করে যাচ্ছে।’
দুদক কমিশনার আছিয়া খাতুন বলেন, ‘দুর্নীতি আমাদের জাতীয় উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। লোভ-লালসা দুর্নীতির প্রধান কারণ। আজ দুর্নীতি শুধু সরকারি অফিসে সীমাবদ্ধ নেই, সবখানে বাসা বেঁধেছে। দুর্নীতি নির্মূলে দুদক প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।’
দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, ‘অর্থনীতির এই কঠিন সময়ে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। দেশ থেকে নানা উপায়ে টাকা পাচার হচ্ছে, এটা দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষিত মানুষ ও অসাধু ব্যবসায়ীরা ডলার পাচার করছে। ডলার পাচারকারীরা দেশের শত্রæ।’ তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থপাচার রোধ করা গেলে আমরা আরও এগিয়ে যেতাম। দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়, তবে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসতে দুদক কাজ করছে।’