কাজির বাজার ডেস্ক
যার জেতার সম্ভাবনা আছে, এ ধরনের প্রার্থীই আমরা চাইব।- জাফর উল্লাহ
ভোটের মাঠের অবস্থা বুঝে যোগ দেওয়ার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেব। – চুন্নু
৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব। – শমসের মবিন
১৪ দলের শরিক হিসেবে ভোটে যাব। -মেনন
নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। – মাইজভান্ডারী
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও ভোটের লড়াই জমবে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট আভাস দিতে পারছে না কোনো দলই। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তফসিল প্রত্যাখ্যান করলেও আওয়ামী লীগ এখনো নিশ্চিত নয়, চিরবৈরী দলটিকে ভোটের মাঠে মোকাবিলা করতে হবে কি না। এমন অবস্থায় বিএনপিকে সম্ভাব্য প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে ধরে নিয়েই ক্ষমতাসীন দল ভোটের কৌশল সাজাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র প্রধান দলগুলোর অংশগ্রহণে ভোট চায় বলেই আওয়ামী লীগের এমন ভাবনা। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে ছাড়াই ভোট করতে হলে তারও প্রস্তুতি রাখবে দলটি। দুটি কৌশল বিবেচনায় রেখেই আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করছে।
অন্যদিকে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে নিবন্ধিত ও নিবন্ধনবিহীন অন্য দলগুলো আছে নানা ধন্দে। জোটগতভাবে ভোট করতে হলে আজকের মধ্যে তা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানাতে হবেÑগত বৃহস্পতিবার এমন ঘোষণা আসার পর ওই দলগুলোতেও একধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘এ মুহ‚র্তে সবাই বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। তারা নির্বাচনে এলে আমরা কৌশল বদলাব। কারণ আমরা সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
তফসিল ঘোষণার পর ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও তার সমমনা দলগুলোর বাইরে তৃণমূল বিএনপিসহ মোট ১৫টি দল ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর বাইরে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলকে সঙ্গে চায় ক্ষমতাসীনেরা। দলগুলো ভোটে এলে আসন ছাড়সহ নানা সহযোগিতার প্রতিশ্রæতি দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মিত্র জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ১২টি দল ভোটে অংশ নেবে কি না, তা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিশ্চিত করেনি। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে নির্বাচন করবে কি না এবং করলে তাতে জাতীয় পার্টি থাকবে কি না, তা-ও অনেকটা অনিশ্চিত। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সময়মতো জানতে পারবেন।’
বিএনপিসহ ১৭টি দল তফসিল বাতিল করে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ও নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোট চায়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল জানান, এই অবস্থান বদল হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি আসবে না ধরে নিয়ে তাঁরা এখন একাধিক বিরোধী দলকে ভোটে চাইছেন। দেশ-বিদেশে বিএনপিবিহীন নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য দেখাতে হলে কয়েকটি ছোট দলকে কিছু আসনও ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
এর বাইরে তৃণমূল বিএনপি, বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা ধর্মভিত্তিক একাধিক দল এবং বিএনপির দলছুট নেতাদের নিয়ে আলাদা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা কিংবা তাদের সরকারের প্রতি সহানুভ‚তিশীল নানা দলে যোগ দিতে প্রভাবিত করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাদের এমপি বানানোর প্রতিশ্রæতিসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হতে পারে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। এমন অবস্থায় দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে আওয়ামী লীগ আগামীকাল থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত আবেদন ফরম বিক্রি করবে। এরপর ২৩ ও ২৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করা হতে পারে। দলের সভাপতিমÐলীর এক সদস্য জানান, দলীয় প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করতে শেষ সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অপেক্ষা করবে। নির্বাচন ঘিরে অনেক নাটকীয়তার সম্ভাবনা আছে। কয়েকটি বড় দল ও কোনো কোনো বড় প্রার্থী শেষ সময়ে ভোটে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ কারণে মনোনয়ন চ‚ড়ান্ত করার বিষয়টি এমনকি ২৮-২৯ নভেম্বর পর্যন্তও গড়াতে পারে বলে ওই নেতা জানান।
দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করতে গত দুই বছর ধরেই একাধিক সরকারি-বেসরকারি সংস্থা দিয়ে বেশ কয়েকটি জরিপ করা হয়েছে। এসব জরিপে যাঁরা এগিয়ে থাকবেন, তারাই মনোনয়নে এগিয়ে থাকবেন। এ ছাড়া প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মতো সাংগঠনিক সক্ষমতা, করোনাকালীন ভ‚মিকা এবং মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করা হবে। চাঁদাবাজ, ভ‚মিদস্যু, জনগণের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী হিসেবে পরিচিত কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও সভাপতিমÐলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘যার জেতার সম্ভাবনা আছে, যে ভালো, এলাকায় থাকে, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেÑএ ধরনের প্রার্থীই আমরা চাইব।’
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে ২০১৪ সালের কৌশল নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি ছাড়াও জোটের শরিক দল জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), তরিকত ফেডারেশনকে বেশি আসন দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে না, এমন দলকেও ছাড় দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকার কোনো কোনো সংসদ সদস্য মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানান, তাঁর দল ভোটের মাঠের অবস্থা বুঝে যোগ দেওয়ার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেবে। তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমশের মুবিন চৌধুরী বলেছেন, তাঁরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবেন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, তাঁর দল ১৪ দলের শরিক হিসেবে ভোটে যাবে। শিগগিরই দলের মনোনয়নের কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী জানান, তাঁরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। বর্তমান আসনেই লড়তে চান।