সিলেট শহরে যান চলাচল ছিলো স্বাভাবিক, সতর্ক অবস্থানে পুলিশ

7

স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপি-জামায়াতের দ্বিতীয় দফায় ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিন সোমবার প্রথম দিনের তুলনায় সিলেট শহরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা, পণ্যবাহী যানবাহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে ছিলো সরব। তবে সিলেট থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে ছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।
সকালে সিলেট নগরীর কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, বাসের কাউন্টারগুলো খোলা থাকলেও কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।
কদমতলীর শ্যামলী পরিবহনের বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা সায়েম আহমদ বলেন, তাদের বাস ছাড়া হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। অন্যরা বাস ছাড়লে তারাও ছাড়বেন। কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে বাস ছেড়ে না গেলেও কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মৌলভীবাজার ও কুলাউড়ার যাত্রী তোলা হয়। চালকেরা ডেকে ডেকে যাত্রী খুঁজছিলেন।
একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় দুজন যাত্রী বসে ছিলেন। তাদের মধ্যে রাজেশ রায় নামের এক যাত্রী বলেন, জরুরি প্রয়োজনে তিনি কুলাউড়ায় যাচ্ছেন। সাধারণ দিনে বাসে যাতায়াত করলেও অবরোধের কারণে আজ বাস ছাড়ছে না। এ জন্য বাধ্য হয়ে বাস থেকে তিন গুণ ভাড়া বেশি গুনে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যেতে হচ্ছে।
নগরীর হুমায়ূন রশীদ চত্বর এলাকায় একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকার যাত্রী তুলছিলেন চালকের সহকারী দিনার আহমদ। তিনি বলেন, মাইক্রোবাসে ১০ জন যাত্রী নিতে পারেন তিনি। প্রতি যাত্রীর কাছে এক হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। সকালে ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে এসেছিলেন। ফিরতি পথে আরও কিছু যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন। অবরোধের সময় সমস্যা হয় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি বুঝেই গাড়ি নিয়ে রওনা দিয়েছি। পথে তেমন একটা সমস্যা হয়নি।
ঢাকার মিরপুর-১০ এলাকার বাসিন্দা রাজীব হোসেন বলেন, ৩ নভেম্বর তিনি সিলেটে এসেছিলেন। ব্যবসায়িক কাজ শেষ করতে অবরোধ শুরু হয়ে গেছে। ট্রেনে যাওয়ার জন্যও কোনো টিকিট কাটতে পারেননি। সোমবার রাতের আগেই তার ঢাকায় পৌঁছানো দরকার। এ জন্য তিনি সকালে যানবাহনের খোঁজে বের হয়েছিলেন। এর মধ্যে ঢাকাগামী মাইক্রোবাস পাওয়ায় তিনি কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন।
সকাল সোয়া ৮টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের লালাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কে কিছু সময় পরপর প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা যাতায়াত করছে। সঙ্গে মোটরসাইকেলও ছিল অনেক।
সকাল পৌনে ৯টার দিকে সিলেট উপশহর মোড় এলাকায় দাঁড়িয়েছিলেন ইয়াসিন আহমদ। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, অন্যান্য দিন নগরীর ভেতরে গণপরিবহন হিসেবে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কর্মস্থলে যেতেন। অবরোধের কারণে সেটি বন্ধ আছে। এখন বেশি ভাড়া দিয়ে অটোরিকশা নিতে হয়।
এদিকে অবরোধে যেন সহিংসতার ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সতর্ক অবস্থানে ছিলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় কথা হয় এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে। সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সিলেট মহানগর এলাকায় কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ তৎপর আছে। সোমবার অবরোধে বিএনপি-জামায়াত রাস্তা কোন মিছিল বা পিকেটিং করতে দেখা যায়নি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরীফ (বিপিএম-বার, পিপিএম) বলেন- জনসাধারণের জান-মালের নিরাপত্তায় মাঠে কাজ করছি। যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে আমরা প্রস্তুত। এখন পর্যন্ত সিলেটে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। জনসাধারণের প্রতি আমাদের আহŸান- আতঙ্কিত বা উদ্বীগ্ন না হয়ে প্রতিদিনের মতো স্বাভাবিকভাবে কাজকর্মের জন্য আপনারা ঘর থেকে বের হন।
উল্লেখ্য, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এবং মির্জা ফখরুলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে রোববার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরাও এই অবরোধ পালন করছে। পাশাপাশি জামায়াত ইসলামীও আলাদা করে এই ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
এর আগে গত সপ্তাহের শেষ তিন দিন (৩১ অক্টোবর-২ নভেম্বর) টানা অবরোধ পালন করে বিএনপি-জামায়াত। তার আগে ২৯ অক্টোবর হরতাল পালন করে তারা। হরতালের দিন সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন। হরতালের পর মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে হয়।