কাজির বাজার ডেস্ক
দুর্গাপূজার পর আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে একদফা দাবিতে চ‚ড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে মহাযাত্রা শুরু হবেÑদাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা চলমান থাকবে। এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অঙ্গনে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে যে, বিএনপির মহাযাত্রার কর্মসূচিতে কী থাকছে।
জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘিরে আবর্তিত হবে মহাযাত্রার কর্মসূচি, যার মূল লক্ষ্য থাকবে তপশিল ঘোষণা ঠেকানো। সেজন্য ২৮ অক্টোবরের পর তিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত টানা কঠোর কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছানোর লক্ষ্য বিএনপির। এর অংশ হিসেবে তপশিলের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই এ কর্মসূচি শুরু করতে চায় দলটি। এ সময় ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও আন্দোলন চলবে। আন্দোলনে পুরো দেশকে যুক্ত করবে বিএনপি। তবে রাজধানীর ওপর থাকবে আন্দোলনের মূল ফোকাস।
নভেম্বরের শুরুতে এমনকি মহাসমাবেশের পরের দিন থেকেও শুরু হতে পারে মহাযাত্রার ওই কর্মসূচি, যা ঘেরাও দিয়ে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভবনমুখী ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হবে।
বিএনপি ও যুগপৎ শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনের এ পর্যায়ে ঘেরাও ছাড়াও বিক্ষোভ, অবরোধ এমনকি হরতালের কর্মসূচিও আসতে পারে। একেবারে শেষ পর্যায়ে দেশজুড়ে চলতে পারে লাগাতার অবরোধের কর্মসূচি। এর মধ্যে থাকতে পারে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ। নেতাকর্মীরা যে যেখানে থাকবেন, সেখান থেকে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। দু-একদিনের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ জোট গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের পর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মহাযাত্রার কর্মসূচি চ‚ড়ান্ত করবে বিএনপি।
এদিকে বিএনপির চ‚ড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের সঙ্গে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যও। ছাত্র জোটের চ‚ড়ান্ত লক্ষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে তোলা। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় ছাত্র সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের, যদিও দিনক্ষণ এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, সরকারবিরোধী চ‚ড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীও সম্পৃক্ত হবে। গত ৩০ ডিসেম্বর আন্দোলন শুরুর পর প্রথম দুটি কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালন করলেও বিএনপির সঙ্গে টানাপোড়েনে পরবর্তী সময়ে একক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে দলটি। এদিকে একদফার আন্দোলনে জামায়াত সম্পৃক্ত হলে দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরও তখন পৃথক কর্মসূচি নিয়ে ছাত্রঐক্যের সঙ্গে যুগপৎ ধারায় আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে পারে বলে দাবি ওই সূত্রের। চলমান একদফার আন্দোলনে সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর নয় দফার ভিত্তিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ১৫টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা বিএনপির চলমান আন্দোলনে সহায়ক হলেও নেতাকর্মীদের রাজপথে থেকেই কর্মসূচি সফল করতে হবে। এখান থেকে দলটির পিছু হটা কিংবা ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। যদিও বিএনপির চ‚ড়ান্ত ধাপের আন্দোলন শুরু হলে ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে যেমন তাদের মাঠে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে, তেমনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার, মামলা, নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতি অতিক্রম করেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং তা সফল করা বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা। বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাবেন এবং মাঠে থেকে আন্দোলনকে সফল করবেন।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে একদফার আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও শরিকরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত বুধবার ঢাকায় জনসমাবেশ করে বিএনপি। সেই সমাবেশ থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ওই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে মহাযাত্রা শুরু হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না। অনেক বাধা আসবে, বিপত্তি আসবে। সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছুটে যেতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা আশা করছি, এর পরের কর্মসূচির আগেই সরকারের বোধদয় হবে, তারা পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করবেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন, দেশকে সংকটের হাত থেকে উদ্ধার করবেন। এটা আমরাই শুধু চাই না, আন্তর্জাতিক বিশ্ব চায়Ñযারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা সবাই চায়। যদি সরকারের বোধহয় না হয়, তাহলে আমাদের কর্মসূচি চলবে।’
২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালিত হবে। এ লক্ষ্যে বিএনপির শরিকরাও প্রস্তুতি শুরু করেছে। জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ অংশ নেবেন। এই কর্মসূচি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে চাই। সরকারের কাছে মহাসমাবেশের বার্তা হবেÑঅবিলম্বে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংকট উত্তোরণে তারা একটা কার্যকরী রাজনৈতিক উদ্যোগ নেবে। তারপরও সরকারের যদি বোধোদয় না হয়, পরের দিন থেকে লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে আসবে। স্বীকৃত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যে ফর্মগুলো রয়েছে যেখানে অবস্থান, বিক্ষোভ, ঘেরাও, অবরোধ এমনকি হরতাল পর্যন্ত আছে-পর্যায়ক্রমে সেগুলো আমরা অ্যাপ্লাই করব। তবে আমরা কখন কোনটাতে যাব, সেটা নির্ভর করবে সরকার ও প্রশাসনের আচরণের ওপর। আমাদের লক্ষ্য, শেষ পর্যন্ত পুরো আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখা। আমরা সরকারের উসকানি, সহিংসতা এড়িয়ে কর্মসূচি করতে চাই, যেন লাখ লাখ মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি দমন-পীড়ন চালিয়ে আন্দোলনকে নিঃশেষ করতে চায়, তাহলে সে চিন্তা হবে খুবই হটকারী এবং তা সরকার ও সরকারি দলের জন্য বুমেরাং হতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে সহিংসতার পুরো দায়-দায়িত্ব তাদেরকেই বহন করতে হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের আরেক শীর্ষ নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহŸায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, বিএনপি ও শরিকরা দাবি আদায়ে প্রায় এক বছর ধরে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছে; কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশের আগে তাদের বোধোদয় না হলে, এরপর কঠোর কর্মসূচি আসবে। সরকারকে গণদাবি মেনে পদত্যাগ করতেই হবে।