পিয়াইনের বুকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ

6

কে.এম লিমন গোয়াইনঘাট থেকে
কোন মেস্তরি নাও বানাইলো এমন দেখা যায়/ঝিলমিল ঝিলমিল করে-রে ময়ূর পঙ্খি নায়, মাঝি-মাল্লাদের ’মারো টান হেইয়ো, জিতেই যাবো হেইয়ো-এসব নানা রকম আওয়াজ ও হাজার হাজার দর্শকদের আনন্দ উচ্ছাসের মধ্যদিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাটে দিন ব্যাপি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে। নৌকা বাইচ অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, আবহমান বাংলার চিরাচরিত লোক উৎসব নৌকা বাইচে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেছে গোয়াইনঘাটের অজো পাড়াগা। মনের খোরাক মেটাতে আনন্দ উচ্ছ¡াসে মেতে উঠে নদীর পারের মানুষগুলো। শিশু, কিশোর, নারী, আবাল বৃদ্ধ বনিতার মিলনমেলায় পরিণত হয় গোটা পিয়াইন নদের মোহনা। হই হুল্লুড় আর নৌকা বাইচের অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ জোগানোর মধ্য দিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় সহস্রাধিক মানুষজন। এ চিত্রে ছিল গোটা এলাকায় আনন্দঘন পরিবেশ। মাইকে উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে, নেচে গেয়ে মাতোয়ারা ছিল অনুষ্ঠানস্থল। বৃহস্পতিবার বিকেলে গোয়াইনঘাট উপজেলার মধ্য জাফলং ইউনিয়নের বাউর ভাগ হাওর এলাকা বাসীর উদ্যোগে বাউর ভাগ হাওর ও বাংলা বাজার এলাকার পিয়াইন নদীর মোহনায় আয়োজিত এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ছোট বড় ৮টি নৌকা অংশ নেয়। নৌকা বাইচ এর ফাইনাল শুরুর আগ মুহ‚র্তে পিয়াইন নদীর দু’পারে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষসহ সব বয়সের কয়েক সহস্রাধিক মানুষের ঢল নামে।
বিকেল ৫ টায় শুরু হওয়া নৌকা বাইচ উপস্থিত দর্শকের করতালি ও মাঝি-মাল্লাদের বিভিন্ন রকম শ্লোগানের মাধ্যমে প্রতিযোগিরা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে শেষ করে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।
প্রতিযোগিতার ফাইনালে গোয়াইনঘাট উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়ন দল বিজয়ী হয়।
প্রতিযোগিতা শেষে বৃহত্তর জাফলং ইঞ্জিন নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি আনোয়ার আহমেদের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তাহমিলুর রহমান।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গোয়াইনঘাট থানার ওসি কে এম নজরুল, সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য সুবাস দাস, কোম্পানীগঞ্জের সমাজ সেবা অফিসার আবু সাঈদ, লেঙ্গুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান, মধ্য জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন শিকদার, পূর্ব জাফলং আওয়ামীলীগের সাবেক আহŸায়ক মিনহাজুর রহমান প্রমুখ।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা একাধিক তরুণ-তরুণীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, কালের আবর্তে এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা প্রায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমান প্রজন্মকে এই খেলায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ বছরের ন্যায় প্রতি বছরই মানুষের ভিন্নধর্মী আনন্দদায়ক এই নৌকা বাইচ আয়োজন করতে আয়োজক কমিটিকে অনুরোধ জানান তারা। পাশাপাশি ঢোলের তালে তালে বৈঠা মারা। হেইয়ো হেইয়ো আওয়াজ করে পানিতে ঝোপাত ঝোপাত শব্দ তুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃশ্যগুলো ছিল অসাধারণ। এক কথায় নৌকা বাইচ দেখে মুগ্ধ এসব তরুণ-তরুণীরা।
আয়োজক কমিটির সভাপতি আনোয়ার আহমেদ বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামীণ ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্যই আমরা এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। আগামী বছরগুলোতে আরও বৃহৎ আকারে এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করবো বলে আমরা আশাবাদী।