দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার পতনের একদফা দাবিতে টানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিএনপির কর্মসূচির দিনগুলোয় নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। তাদের ‘পালটাপালটি’ কর্মসূচি ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। যদিও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকলেও নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুর সুরাহা হয়নি এখনো। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ ইস্যুতে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বড় দুই দলকে সংলাপে বসার তাগিদ দিয়ে আসছে। সংকট নিরসনে পর্দার ভেতরে ও বাইরে দেশি-বিদেশি নানা মহলের তাগিদ ও তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে। বড় দলগুলোর রাজনৈতিক অসহনশীলতা, অনমনীয় মনোভাব এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে সৃষ্ট সংকটের প্রেক্ষাপটে বিদেশি ক‚টনীতিকরা আগে পর্দার আড়ালে তৎপরতা চালালেও এখন প্রকাশ্যে শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ। ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ নানা পদক্ষেপও নিতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহনশীল আচরণ দেখা যাচ্ছে না। একদিকে দলীয় প্রধানের মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বিএনপি, অন্যদিকে অপরাজনীতি ছাড়তে বিএনপিকেও ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এমন আলটিমেটামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ রাজনীতির মাঠে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন। আবার কেউ বলছেন, এ শুধু কথার যুদ্ধ, শঙ্কার কিছু নেই। তবে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে দেশের বড় রাজনৈতিক দল দুটির বিপরীতমুখী এমন অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, পালটাপালটি আলটিমেটামের পরিণতি হয় ভয়াবহ। আলোচনার মাধ্যমে যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করা না যায়, তাহলে এর মাশুল দিতে হবে পুরো জাতিকে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, দেশে মূল্যস্ফীতি, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের অযৌক্তিক ঊর্ধ্বগতি জনসাধারণের জীবনযাত্রাকে সংকটে ফেললেও রাজনীতির মাঠ এখন ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা টিকে থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এক্ষেত্রে মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এদেশের রাজনীতি কি শুধুই ক্ষমতা লাভের, জনস্বার্থের নয়? আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে কোন দল ক্ষমতায় যাবে, তা ভোটের মাধ্যমে ঠিক করবে জনগণ। তাহলে জনগণ উপেক্ষিত থাকবে কেন?
ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল বারবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের গতি বৃদ্ধির ঘোষণা দিলেও মূলত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরই মাঠে দেখা যায়। নির্বাচন ঘিরে উচ্ছ¡াসও তাদের ভেতরেই সীমাবদ্ধ। নানা চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষের মনে এ নির্বাচন ঘিরে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ক্রমে বাড়ছে। সাধারণত রাজনৈতিক সংঘাতে রাজনীতিকদের যতটা মাশুল গুনতে হয়, জনগণকে গুনতে হয় এর চেয়ে অনেক বেশি। মনে রাখতে হবে, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে নানা সংকটে রয়েছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা এ সংকট আরও বাড়িয়ে তুলছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাজনৈতিক সংকট দূর করার জন্য আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, এর অবসান হওয়া দরকার। কাজেই দেশ ও জনগণের স্বার্থে সরকার ও বিরোধী-দুপক্ষই অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে সংলাপের টেবিলে বসবে, এটাই প্রত্যাশা।