মো. শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর থেকে
সুনামগঞ্জের হাওর বেষ্টিত জগন্নাথপুর উপজেলায় কৃষি বিপ্লব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। এরই অংশ হিসেবে এবার উপজেলার সকল অনাবাদি পতিত জমি চাষের আওতায় নিয়ে আসতে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষিতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হচ্ছেন কৃষকরা। এসব প্রযুক্তি ও কলা-কৌশলের মাধ্যমে অল্প জমিতে কম খরচে বেশি ফলন উৎপাদন। সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ। গ্রামীণ জনপদের কৃষকদের বেশি আকর্ষিত করেছে। টিনের তৈরি ট্রে-তে ধানের চারা বপন। মাত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যে এসব চারা সমুলে তুলে নিয়ে যন্ত্রের মাধ্যমে জমিতে রোপন। ধান পাকলে আবার যন্ত্রের মাধ্যমে দ্রæত কর্তন। এ যেন অ™‚¢দ অনুভ‚তি ও নবরূপে কৃষি জাগরণ। গত ক’বছর আগেও জমির মালিক চাষাবাদ কষ্টের ভয়ে ও ধান কর্তনে শ্রমিক সংকট আতঙ্কে নিজে অল্প জমি আবাদ করে অধিকাংশ জমি বর্গাচাষীদের দিয়ে দিতেন। এখন প্রযুক্তির আর্শিবাদে একজন কৃষক চাইলে একসাথে শতাধিত কেদার জমি অনায়াসে আবাদ করতে পারেন। এখন আর জমি চাষাবাদ কষ্ট ও ধান কর্তন নিয়ে কোন শঙ্কা নেই।
সেই সাথে ফলজ সহ অন্যান্য বৃক্ষ রোপন, অন্যান্য শস্য আবাদে কৃষকসহ সকল মানুষকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কৃষক প্রশিক্ষণ, সরকারিভাবে বিনামূল্যে সার, বীজ, গাছের চারা বিতরণ সহ নানা কলা-কৌশল শেখানো হয়। যাতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জমি আবাদ করতে পারেন কৃষকেরা। এতে অনেকটা সুফলও এসেছে।
এবার জগন্নাথপুর উপজেলার সকল পতিত জমি আবাদের আনতে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমাম্য ব্যক্তি, কৃষক ও সাধারণ মানুষকে। যাতে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় অনাবাদি জমিগুলো আবাদের আওতায় আসে। তা হলেই জগন্নাথপুরে কৃষি বিপ্লব ঘটবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে এবার ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রান্তিক কৃষকদের আরো উদ্বুদ্ধ করতে সভা, সমাবেশ সহ নানাভাবে প্রচারণা শুরু করেছে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
এরই অংশ হিসেবে ২৪ সেপ্টেম্বর রোববার জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উদ্যোগে উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে অনাবাদি পতিত জমি চাষের আওতায় আনার পরিকল্পনা, তৈল ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও আগামী বোরো ধান নির্বিঘেœ চাষাবাদের লক্ষ্যে কৃষক সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম। কলকলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিক মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ। বক্তব্য রাখেন, ইউপি সদস্য আজিজুল হক, মোহন মিয়া, আবদুল কাইয়ূম, আবুল হাসান, নারী ইউপি সদস্য রোজিনা বেগম, কৃষক আংগুর মিয়া, তাজ উদ্দিন, জহিরুল ইসলাম প্রমূখ। এতে স্থানীয় সর্বস্তরের জনতা অংশ গ্রহণ করেন। সভায় পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে ও কৃষি বিপ্লব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কলা-কৌশল ও পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, আমরা জগন্নাথপুর উপজেলায় কৃষি বিপ্লব বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। এ জন্য উপজেলার সকল অনাবাদি পতিত জমি আবাদের আওতায় আনতে হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে জমির মালিক এবং কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। যাতে সবার প্রচেষ্টায় পতিত জমিগুলো আবাদের আওতায় আসে। এসব বার্তা প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি সমাবেশ সহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন থেকে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষি জাগরণ সৃষ্টির লক্ষে সভা-সমাবেশ চলবে।