শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
সরকারের নিধারিত মূল্যের বেশি দামে আলু বিক্রি করায় মৌলভীবাজার জেলায় ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম নিয়ে অস্থিরতা শুরু দেখা দিয়েছে। আলুর দামের উর্ধগতি ঠেকাতে সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা আমলে নিচ্ছেন না ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা। পাঁচ থেকে দশ টাকা অতিরিক্ত দামে আলু বিক্রি করছেন তাঁরা। এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের সাধারণ মানুষ। সোমবার জেলা শহরের বিভিন্ন আরত ও কাঁচাবাজার ঘুরে আলুর দামের এই তারতম্য দেখা গেছে। শহরের পশ্চিমবাজারের একাধিক দোকানীদের সাথে কথা বললে তাঁরা জানিয়েছেন ক্রেতাদের কাছে তাঁরা আলু বিক্রি করছেন ৪৫-৪৮ টাকা দামে। শ্রীমঙ্গল ক্রেতা আক্তারুজ্জামান দিপু, শহিদ আহমদ, অজিম উদ্দিন ও বাবুল মিয়া অভিযোগ করে জানান, সরকার ৩৫ টাকা আলুর কেজি নির্ধারণ করে দিলেও তা বিক্রেতারা মানছেন না।
ভোক্তার সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেছি। নিয়মিত বাজার মনিটরিংও চলছে। ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে কয়েকদিন সময় চেয়েছেন। বাজারে নতুন আলু সপ্তাহ খানেকের মধ্যে চলে আসবে। পরে আলুর দাম কমে যাবে। রওশন মিয়া একজন ক্রেতা বলেন, আলু গত কয়েকদিন ধরেই বেশি দাম দিয়ে কিনছি। কোনো দোকানে ৪৫ টাকা কেজি আবার কোনো দোকানে ৪৮ টাকা কেজি। বিক্রেতারা তাঁদের মত করে দাম রাখছে। সরকার ৩৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাস্তবে বাজারে সেই দাম কার্যকর হয়নি।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, পর্যাপ্ত আলু থাকার পরও চড়া দামে আলু বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এরমধ্যে লাল রঙের আলু ক্ষেত্রবিশেষে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকা দরে। কোনো কোনো দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে ৪৩ টাকায়। শ্রীমঙ্গল শহরের পোস্ট অফিস সড়কে মেসার্স গোবিন্দ ভান্ডারে, শ্রীলক্ষী ভান্ডার, মেসার্স জয়গুরু ভান্ডারসহ অনেক দোকানদারকে আলুর দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, বেশি দামে আলু কেনায় বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।
মৌলভীবাজার পশ্চিমবাজারের কয়েকটি আলুর আরতের মালিকদের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা বলেন, আমরা আলু কিনে আনি শ্রীমঙ্গল থেকে। সেখান থেকেই বেশি দামে এখন আলু কিনে আনতে হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে যেতে যেতে সেই দাম আরো বাড়ছে। শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী কামাল হোসেন জানান, আলু খরিদ ৩৭ টাকা, গাড়ীভাড়াসহ খরচ পড়ে ৪০ টাকা। বিক্রি করছে ৪৫ টাকায়। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আলু ব্যবসায়ীদের বৈঠক করেছি, তাদেরকে বলেছি লাভ কম করে ভোক্তার কাছে আলু বিক্রি করার অুনরোধ।’
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মৌলভীবাজারে আলুর কোনো সংরক্ষানাগার না থাকায় জেলার আলুর বাজার মূলত শ্রীমঙ্গলকেন্দ্রীক। শ্রীমঙ্গল থেকে বিক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে আলু কিনে আনছেন। এ বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের বৈঠক করেছেন শ্রীমঙ্গলের আলু ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে খাওয়ার আলুর স্বল্পতা আছে। যা আছে সেগুলো বেশিরভাগই বীজের জন্য রাখা আলু। যেকারণে তাঁরা মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া থেকে বেশি দামে আলু কিনে আনছেন। এতে করে জেলায় ভোক্তা পর্যায়ে বাজারে আলুর দাম বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেছি। নিয়মিত বাজার মনিটরিংও চলছে। ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে কয়েকদিন সময় চেয়েছেন। বাজারে নতুন আলু সপ্তাহ খানেকের মধ্যে চলে আসবে। পরে আলুর দাম কমে যাবে।
এদিকে দেশের সবথেকে বেশি আলু উৎপাদন হওয়া মুন্সিগঞ্জ, বগুড়াতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে আলুর দাম নিয়ে নৈরাজ্য চলছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু মজুদ থাকার পরও অদৃশ্য, অজানা কারণে বেশি দামে আলু বিক্রি করছেন বড় বড় আলু ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়েছে দেশের আলুর বাজারে।