সকাল থেকে রাস্তায় লাইন ধরে চলেছেন তারা। কেউবা রিকশায়, কেউবা অটোরিকশায় আবার কেউবা পদব্রজে রওয়ানা। সবার গন্তব্য নগরীর দুই মাজারের উদ্দেশ্যে। কেউবা হযরত শাহজালাল (র.) আবার কেউবা হযরত শাহপরান (র.) এর মাজারমুখী।
সিলেটে এমনটি দেখা যায়নি এর আগে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে কাঙ্গালী ভোজ হয়েছে, হয়েছে শিরনি বিতরণ। হবে আগামীতেও। তবে গণভোজ এই প্রথম। সিলেট সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর উদ্যোগে এবার সিলেটবাসী পেলেন একই সাথে দুদু’টি গণভোজ। সোমবার গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ হয় একটি ব্যতিক্রমী সংবাদ। নবনির্বাচিত সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের উদ্যোগে এবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে দুদু’টি গণভোজের আয়োজন করা হয়েছে সিলেটে। একটি হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার প্রাঙ্গণে। অপরটি হযরত শাহপরানের মাজারে।
এমন সংবাদে সাঁড়া পড়ে সিলেট মহানগরজুড়ে। রাজনৈতিক অঙ্গনের নেতাকর্মীদের সাথে সাথে আগ্রহী হয়ে উঠেন সাধারণ মানুষও।
এদিকে আগের রাত থেকে দুই ভেন্যু হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরাণ (র.) এর মাজার প্রাঙ্গণে সার্বিক প্রস্তুতির কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা। তাদের মধ্যে ছিলেন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ এবং অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। তারা প্যান্ডেল তৈরি, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, বসার জায়গা, সামিয়ানা টানানো, রান্না-বান্না, মহিলাদের বসার জন্য বিশেষ স্থানের ব্যবস্থা ইত্যাদির কাজ তদারকিতে নেমে পড়েন।
তারপর সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে শাহজালাল ও শাহপরানের মাজারমুখী মানুষের ঢল নামে। কেউ রিকশা কেউবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা আবার কেউবা পদব্রজে রওয়ানা হন ভেন্যুর উদ্দেশ্যে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১৫ই আগস্ট) দুপুর দুটোয় গণভোজ শুরু হওযার কথা থাকলেও ১২টার দিকে দুটো ভেন্যুই লোকারণ্য হয়ে পড়ে। সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় আওয়ামী ঘরানার বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ছিলেন সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি ও শাহপরান থানা পুলিশ। জোহরের নামাজের পরপরই হযরত শাহজালালের মাজার মসজিদে শুরু হয় মিলাদ মাহফিল। এরপর দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই দুই ভেন্যুতেই একযোগে খাবার পরিবেশন শুরু হয়। চলে একটানা। শেষ হয় বিকেল ৫টার দিকে।
হযরতর শাহপরান (র.) মাজার মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় আসরের নামজের পর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই ভেন্যুতে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ গণভোজে অংশগ্রহণ করেছেন।
এদিকে, সিলেটে এমন একটা আয়োজন নিয়ে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নগরীর ইলেক্ট্রি সাপ্লাই এলাকার একটা মেসে থাকেন দিনমজুর মিন্টু মহারাজ (৪৫)। তার বাড়ি নরসিংদি জেলায়। ছেলেকে নিয়ে প্রথম পর্বেই তিনি গণভোজে অংশগ্রহণ করেন। খাবার শেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে তিনি বলেন, সিলেটে গত ২০ বছর ধরে আছি। বিভিন্ন প্রোগ্রামে প্রায়ই অংশগ্রহণ করি। সেগুলো সাধারণত কাঙালি ভোজ হিসাবে পরিচিত। এই প্রথম গণভোজে অংশগ্রহণ করলাম। খাবার দাবার যথেষ্ট ভালো হয়েছে। এজন্য উদ্যোক্তা সিসিক’র নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামানকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সাধারণ মানুষের মতো ব্যাপক সাড়া পড়েছে দলীয় নেতাকর্মীসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে। এর আগে এমন আয়োজন সিলেটে হয়নি।
এ প্রসঙ্গে যুবলীগ নেতা রুহেল আহমদ বলেন, শোক দিবসে মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের আয়োজন সিলেটে বিরল। এমন আয়োজন এর আগে সিলেটে হয়নি। কাঙালি ভোজ শিরনি বিতরণ ইত্যাদি বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। আগামীতেও হবে। কিন্তু গণভোজ এই প্রথম। তিনি এবং গণভোজে অংশ নেয়াও সাধারণ মানুষ মেয়র কাছ থেকে আরও নানা অভিনব আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে, পুরো আয়োজন সফলের সাথে জড়িতরা জানিয়েছেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত সুশৃঙখলভাবেই দুটি গণভোজ শেষ হয়েছে এবং প্রায় ১৫ হাজারের বেশী মানুষ গণভোজে অংশগ্রহণ করেছেন।
মিলাদ দোয়া ও গণভোজে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এড. মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দিন খানসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ। বিজ্ঞপ্তি