শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষসহ নানা সংকটে ধর্মপাশা ও মধ্যনগরের তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়

9

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষসহ নানা সংকটের কারণে যেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়াতেই বেগ পেতে হচ্ছে, সেখানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অতিরিক্ত আরও তিনটি শ্রেণির পাঠদান বাড়তি চাপ হিসেবে বিবেচনা করছেন শিক্ষকরা। আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে ইতিবাচক ফলাফলের আশা করছেন তারা।
ধর্মপাশা ও মধ্যনগরের তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তারা বলছেন, এ কাজের জন্য আলাদা কোনো বেতন-ভাতা বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। যদিও শুরুতে প্রধান শিক্ষক মূল বেতনের ৩৫ শতাংশ এবং সহকারী শিক্ষকরা ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত বেতন পাবেন বলে জানানো হয়েছিল। এখনও তা কার্যকর হয়নি।
সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে ধর্মপাশার সেলবরষ ইউনিয়নের গাবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে, সদর ইউনিয়নের মেউহারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৪ সালে এবং মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুÐা দক্ষিণ ইউনিয়নের চাপাইতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাড়তি পাঠদান চালু করা হয়। এসব বিদ্যালয়ে সব শ্রেণিতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার মান ও এই প্রক্রিয়ায় পাঠদানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মেউহারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ জন শিক্ষকের বিপরীতে প্রাথমিক শাখায় ২৮২ জন ও ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ২১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর করতে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে আধাপাকা দুটি ও স্থানীয় গ্রামবাসীর অর্থায়নে টিনের চালাবিশিষ্ট একটি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। গাবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আটজন শিক্ষকের মাঝে কর্মরত আছেন সাতজন। এ বিদ্যালয়ে প্রাথমিকে ২৬৫ এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। চাপাইতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয়জন শিক্ষকের মাঝে কর্মরত আছেন চারজন। এই প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকে ১৫০ এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাত্র ১৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ে মাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষ থাকায় একই শ্রেণিকক্ষে একই সময়ে একাধিক শ্রেণির পাঠদান করাতে হয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা।
এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের কোনেটিতেই ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের কোনো শিক্ষক না থাকায় প্রাথমিকের শিক্ষকদেরই সে বিষয়ে পাঠদান করতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার মান ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। গাবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক না থাকায় তাদেরই সেসব বিষয় পড়াতে হচ্ছে। এতে চাপ কিছুটা বেড়েছে। ধর্মপাশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দাস বলেন, ‘এসব বিদ্যালয়ে পাঠদানের যৌক্তিকতা কতটুকু তা জানতে অধিদপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সংকটগুলো দূর করতে পারলে যৌক্তিকতা রয়েছে। অন্যথায় নয়। তাদের বক্তব্যের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।