বাজারে সিন্ডিকেট আছে- এ তথ্য এখন সবারই জানা। এমনকি জাতীয় সংসদের অধিবেশনেও খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারসাজিতে কারা জড়িত সে কথাও জানেন বলে সংসদে ইঙ্গিত দিয়েছেন মন্ত্রী। তবুও জড়িত রাঘববোয়ালরা আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এমনকি এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এ পর্যন্ত ৫০টি মামলা দায়ের করলেও শাস্তি পায়নি কেউ-ই। কমিশন বলছে, মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রম চলছে।
এর আগে সিন্ডিকেট শনাক্তে বাজার তদারকিতে নামানো হয় গোয়েন্দা সদস্যদের। নামানো হয় পুলিশও। কিছুই কাজে দিচ্ছে না। সিন্ডিকেটের হোতা বলে সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রীর দিকে অভিযোগের তীর। উল্টো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে সংকট তৈরি হবে বলেও দাবি করেন।
দেশে ভোগ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। বাজারে পণ্যের নির্ধারিত দামের বিষয়টি তদারকি করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। এ ছাড়া কৃষি অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারি করে থাকে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
সম্প্রতি, কাঁচা মরিচের ক্ষেত্রে যে দাম বাড়ল, এতেও ছিল অতিমুনাফা লোটার প্রবণতা। যদি তাই না হয়, তাহলে ভারত থেকে আমদানির খবরেই এত দ্রæত কেন নেমে গেল দাম।
বাজারে কেন বাড়ছে দাম? মূলত দেশের ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের বাজার জিম্মি হয়ে পড়েছে ৩৬টি শক্তিশালী, ক্ষমতাধর কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। তাদের কাছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারও যেন অসহায়। অথচ ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সময় সময় সরকার সবরকম সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে তাদের। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিত্যপণ্যের আমদানির এলসি খুলতে যথাযথ নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ডলারের দামও প্রায় স্থিতিশীল। এমতাবস্থায় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের যখন সহনশীল থাকার কথা, তখন হঠাৎ করে তারা নিত্যপণ্যের বাজারে কারসাজি শুরু করেছেন কেন- তা বোধগম্য নয়। এমন হতে পারে, রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম আরও এক দফা বাড়ানোই তাদের মূল লক্ষ্য। যা কাম্য তো নয়ই, প্রত্যাশিতও নয়।
অনেক আগেই এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নেওয়ার দরকার ছিল। এক মন্ত্রণালয় আরেক মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলছে। কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। তার মানে হলো ব্যবসায়ীরা যা পারে মুনাফা করুক। ফলে ব্যবসায়ীরা বুঝে গেছেন, সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না। কারসাজি করে সবাই পার পেয়ে যাচ্ছে বলেই দাম বাড়িয়ে ক্রেতার পকেট কাটার একটা প্রতিযোগিতায় নেমেছে সবাই।
এ ছাড়া সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে গঠিত আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে গঠিত কমিশনকে আইন অনুসারে কাজ করতে হবে। কারণ, বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা রক্ষা ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন গঠনের বিধান রেখে ‘প্রতিযোগিতা বিল, ২০১২’ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।
বিলে পণ্য বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করলে ১ বছরের কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।