আমাদের শিক্ষাক্রমের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিনটি শ্রেণিতে চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০২৩) নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হয়েছে। এ তিনটি শ্রেণি হলো প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম। আগামী বছর (২০২৪ শিক্ষাবর্ষে) থেকে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। এরপর ২০২৫ সালে তা চালু হবে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে। আর উচ্চ মাধ্যমিকে একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। এ খবর নিঃসন্দে ভালো। আমরা মনেকরি শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন সংযোজন হচ্ছে। কিন্তু সংকট অন্যখানে।
সারাদেশের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান জানান, এনসিটিবি বা মাউশি অধিদপ্তর এখনও চিঠি দিয়ে তাদের এ বিষয়ে কোনো কিছু জানায়নি। তাই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক কারও সেভাবে প্রস্তুতি নেই। নতুন শিক্ষাবর্ষের আর মাত্র ৫ মাস বাকি থাকলেও এ নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে কোনো কর্মশালা হয়নি। নেয়া হয়নি তাদের কোনো পরামর্শ। এত বড় একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে, অথচ গ্রামগঞ্জের বহু শিক্ষক জানেনই না। এটা মনে হয় ভাবা উচিৎ ছিল।
আগামী জানুয়ারি থেকে আমাদের শিক্ষায় বিভাগ বিভাজন থাকছে না। এ ছাড়াও আগামী জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার বিভাগ বিভাজন থাকছে না। এর পরিবর্তে সব শিক্ষার্থীকেই মাধ্যমিক পর্যন্ত অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়তে হবে। বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চ মাধ্যমিকে, অর্থাৎ একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিভাগ বিভাজন বন্ধের বিষয়ে এখনও অফিসিয়ালি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কিছু জানানো হয়নি। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিশু শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষাই দিতে হবে না। তাদের শুধু শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে। এ ছাড়া ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ ভাগ। বাকি ৪০ ভাগ সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। আর প্রাথমিকের মতো মাধ্যমিকে একইভাবে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে ৬০ ভাগ। বাকি ৪০ ভাগ সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। তবে জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হয়েছে শতভাগ। এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম সব শ্রেণিতে একসঙ্গে চালু না করে ধাপে ধাপে কার্যকর করা হচ্ছে।
কারণ, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে নতুন পাঠ্যবই তৈরি করা হয়। নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য শিডিউল তৈরি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও নতুন পাঠ্যবই রচনা এবং মুদ্রণ একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকর করা হলে ভুলত্রæটি শুধরে সামনে এগোনো যায়। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ভ‚মিকা গুরুত্বপূর্ণ। করেন এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে এগিয়ে যেতে হবে।