বিভিন্ন ধরনের অজুহাত সামনে রেখে বাজার অস্থির হওয়ার বিষয়টি যেমন নতুন নয়; তেমনি কারসাজিসহ নানা কারণেই নিপত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয় বারবারই আলোচনায় আসে। অথচ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নানা সংকটে লাগামহীন সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। যা এবারের বর্ষা মৌসুমে আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এমনটিও জানা যাচ্ছে যে, এ সময় আমদানি পণ্যের পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত পোল্ট্রি ও কাঁচাবাজারের পণ্যে ভোক্তা ব্যয় বেড়ে যেতে পারে আরও কয়েকগুণ। ফলে বাড়বে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং বাজার অস্থিরতা আরও বৃদ্ধির যে শঙ্কা উঠে আসছে- তার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের তৎপর হতে হবে।
উল্লেখ্য, বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনের (আইপিসি) হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, আগামী ৩ মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের সংখ্যা আরও ৭ শতাংশ বেড়ে ৩১ শতাংশ হতে পারে। যা গত এপ্রিল পর্যন্ত ২৪ শতাংশ ছিল। মূল্যস্ফীতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে এর কারণ হিসেবে দেখিয়েছে সংস্থাটি। আমরা মনে করি, প্রতিবেদনটি আমলে নিতে হবে, একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের এটাও অনুধাবন করা জরুরি, বাজার অস্থির হলে তা সাধারণ মানুষের জন্য কতটা দুর্ভোগের কারণ হয়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে যাপনে কতটা দিশেহারা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়- এটা এড়ানো যাবে না।
বলা দরকার, যে আশঙ্কার বিষয়টি উঠে আসছে ইতোমধ্যে বাজারে এর প্রভাব স্পষ্ট। এই সময়ে বাজার আরও চড়া রয়েছে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম। এমনকি চাহিদা না থাকলেও অনেক পণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। টানা বৃষ্টি, পরিবহণ ও শ্রমিক সংকট, তীব্র যানজট ও উৎপাদন হ্রাসে বাজারে বেশিরভাগ পণ্যের সরবরাহ অর্ধেকে ঠেকেছে। আর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিক ও যানজটের সমস্যা চলে গেলেও বৈরী আবহাওয়া ও উচ্চ উৎপাদন ব্যয়ে গোটা বর্ষাজুড়েই উত্তাপ বিরাজ করবে খাদ্যপণ্যের দামে।
আমরা বলতে চাই, একদিকে দামের কারণে আশঙ্কা অন্যদিকে যদি ব্যয়ে উত্তাপ বিরাজ করে তবে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হবে। এ ছাড়া এটাও বিবেচ্য যে, ডলার সংকটে ক্রমেই জটিল হচ্ছে ভোগ্যপণ্যের আমদানি পরিস্থিতি। আবার আমদানি করেও তার প্রভাব পড়ছে না বাজারে- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। সেক্ষেত্রে বলা দরকার. গত মাসে পেঁয়াজ-আদার পর চলতি মাসে ব্যাপক কাঁচামরিচ আমদানি করেও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা- এটাও আলোচনায় আসছে।
লক্ষ্যনীয়, ঈদ-পরবর্তী বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, চাহিদা না থাকলেও বাড়তিই রয়েছে বেশিরভাগ পণ্যের দাম। চিনি, পেঁয়াজ, আদা-রসুনসহ সব মসলা ও সবজির দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে গত এক মাসে ১৯ হাজার মুরগির খামারি সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। খামারিদের আরেকটি অংশ এ মাসের মধ্যে দাম না বাড়লে তারাও উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন- এটাও জানা যাচ্ছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাজার অস্থিরতা আরও বৃদ্ধির যে শঙ্কা উঠে আসছে তা আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একই সঙ্গে এর পেিরেপ্রক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া মানুষকে জিম্মি করে কেউ যেন নিজের স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া অপরিহার্য। কালোবাজারি বা অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যথাযথ মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে। আমদানি পণ্যের পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত পোল্ট্রি ও কাঁচাবাজারের পণ্যে ভোক্তা ব্যয় বেড়ে যেতে পারে আরও কয়েকগুণ- এটা যখন জানা যাচ্ছে, আর এমন পরিস্থিতিকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টিও উঠে আসছে; তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বাজার বৃদ্ধির শঙ্কা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।