স্টাফ রিপোর্টার
সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়কে দ্বিতীয় দিনের গণপরিবহন শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট (কর্মবিরতি) পালিত হয়েছে।। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা। বিশেষ করে, জাফলং ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। বেশি ভাড়া দিয়ে প্রাইভেট গাড়ি ও গ্যাসে চালিত অটোরিকশা নিয়ে যেতে হচ্ছে অন্য জেলা থেকে আসা পর্যটকরা। তবে এই মহাসড়কে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ থাকলেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনা ত্রি-হুইলার গাড়ি চলাচল করছে।
আজ বুধবার (১২ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে সিলেট জেলা জুড়ে বাস-মিনিবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনাসহ সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। জানা গেছে, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের ছাঁটাইয়ের লক্ষ্যে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে বাস আটকে রাখার প্রতিবাদে এবং জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদকে গ্রেফতারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
এর আগে রোববার রাতে এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মইনুল হক।
পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকায় বাসচাপায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার পাঁচজন যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় গত শনিবার রাতে সিলেটের জৈন্তাপুর ১৭ পরগনার সালিস সমন্বয় কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের ছাঁটাইয়ের দাবি ওঠে। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কার্যক্রম শুরু করে সালিশ সমন্বয় কমিটি। ফলে মহাসড়কটিতে চলাচল করা কয়েকটি বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকাল বাস চলতে না দেওয়ায় জৈন্তাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন পরিবহন শ্রমিক ও মালিকেরা। অভিযোগে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদ বলেন, সালিশ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিলেট তামাবিল মহাসড়কে রোববার থেকে কোনো ধরনের বাস-মিনিবাস চলাচল করতে পারেনি। তবে অন্য যে কোনো যানবাহন স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
তিনি আরও বলেন, দরবস্ত বাজারে বাসচাপায় পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বাস মালিক সমিতি বা এ রুটের পরিবহনের সঙ্গে জড়িত কেউই দুঃখ প্রকাশ করেনি। এমনকি আহত বা নিহতদের পরিবারের কোনো খোঁজখবরও নেননি তারা। এ ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার রাতে বৃহত্তর জৈন্তাপুর ১৭ পরগণার সালিশ সমন্বয় কমিটির বৈঠক হয় এবং সে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিলেট-তামাবিল সড়কে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আমরা বাস ও মিনিবাস চলাচল নিষিদ্ধ করেছি। জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, এ ঘটনায় তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। ধর্মঘটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাস ও ট্রাকের শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
এবিষয়ে সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকাল থেকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে কোনো বাস চলছে না। তবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনা চলাচল করছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হলে বুধবার সকাল ৬টা থেকে জেলাজুড়ে কোনো ধরনের গণপরিবহন চলবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দাবি পূরণ হয়নি। তাছাড়া আমাদের কেউ বৈঠক করার জন্যও ডাকেনি। তাই আমরা আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। এর মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হলে বুধবার থেকে পুরো সিলেট জেলায় কর্মবিরতির ডাক দেবো।
তিনি আরও বলেন, সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন, সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন, জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন (২০৯৭) ও জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন (৭০৭) এবং জেলা লেগুনা ত্রি-হুইলার শ্রমিক ইউনিয়ন এই পাঁচটি সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মবিরতির আহŸান করেছে।