কোরবানি ঈদের আর মাত্র হাতেগোনা তিন/ চারটা দিন বাকি। কর্মব্যস্ত মানুষ ছুটছে গ্রামের দিকে। কেউ কেউ একটু আগে পরিবার পরিজনকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন এরই মধ্যে। কেউবা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। উপচে পড়া ভিড় চারিদিকে। সাধারণত ঘরমুখী মানুষ যোগাযোগ ও যাতায়তের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল ও নৌপথকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ইতোমধ্যে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, ইস্টিমারের টিকিট বিক্রির হিড়িক পড়েছে। কাউকে কাউকে এ নিয়ে চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয়েছে। গরিব দুঃখী থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সবাই সাধ্যমতো টিকিট কিনেছেন ইতোমধ্যে পরিবারের জন্য। কেউবা রেলস্টেশনে, বাস স্টেশনে ভিড় করছেন শেষ মুহ‚র্তের টিকিটটা যেন হাতছাড়া না হয়ে যায়। কিন্তু স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে চাইলেও সেই স্বস্তি আর শান্তিতে বাড়ি ফেরা যেন অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার কারণে, রাস্তার খানাখন্দ আর খেয়ালিপনার কারণে। এ চিত্র নুতন নয়। তবু এত কষ্টের পর ঘরে ফেরার আনন্দটাই যেন আলাদা।
সাধারণত, ঈদকে সামনে রেখে পরিবহণ খাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে কিন্তু সেটার সুযোগ সবারই ভাগ্যে জোটে না। কারণ, ভালো ও চাহিদামতো টিকিট সংগ্রহ যেন সোনার হরিণ। ঘরমুখী মানুষের টিকিট পেতে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার দুরাবস্থা দেখে এর আগে মনে হতো যেন, কোনো শরণার্থী শিবির। তারপর রয়েছে কালোবাজারি, ভাড়া করা লোক, কিংবা ট্রেন ও বাস কাউন্টারের ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্টদের পছন্দমতো লোকের জন্য বরাদ্দ করা সিটের আলাদা ব্যবস্থা। অতএব, ট্রেন ও সড়কপথে নির্ধারিত সিট না পেয়ে বিকল্প পথে মানে ট্রাক, বাসের ছাদ কিংবা ট্রেনের ছাদের মতো অনিরাপদ ব্যবস্থার কাছে জীবন সপে দিচ্ছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ আবার টিকিট না পেয়ে বাসে ১০/১৫ ঘণ্টার পথ দাঁড়িয়ে পাড়ি দিচ্ছেন। তারপরও রয়েছে পথে নানান রকম বিড়ম্বনা- ছিনতাই, প্রতারকচক্র, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টির দৈরাত্ম্য আর ১৫-২০ কিলোমিটার যানজট, শিডিউল বিপর্যয় আর একসিডেন্ট। অনেকে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। এছাড়া বৃদ্ধ ও বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন দীর্ঘ বিরতির যাত্রা পথে।
এখন বর্ষার মৌসুম। নদীর উত্তাল ঢেউয়ে নিরাপত্তার কথা মাথা রাখা দরকার। লঞ্চঘাটও টিকিট কালোবাজারিদের দখলে। ঘাটে ঘাটে টোল আদায়, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল, চালকের অদক্ষতা, প্রতিযোগিতার মানসিকতার কারণে প্রায় প্রতি বছর ঈদের সময় শত শত তাজাপ্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে। অনেকেরই সলিল সমাধি হয়ে যাচ্ছে- ফলে প্রিয়জনরা ঈদের সময় প্রিয় মুখের সঙ্গে ঈদের আনন্দ আর কি ভাগাভাগি করবে উল্টো প্রিয়জনের ভাগ্যে লাশটি দেখারও সৌভাগ্য হয় না।
যতদূর জানা যায়, সারা বছর লক্কড় ঝক্কড় সড়ক মাড়িয়ে হতভাগ্য মানুষজন যাতায়াত করলে ঈদের সময় জনপথ বিভাগ ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় নড়ে চড়ে বসেন। শুরু হয় খানাখন্দ আর লক্কড় ঝক্কড় রাস্তার মোরামত কাজ। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কাঁচা ঘরের মেঝের মতো চলে সড়ক লেপে দেয়ার কাজ। ফলে তড়িঘড়ি করে বিটুমিন আর খোয়া দিয়ে খানাখন্দ ঢেকে দেয়া রাস্তা ঘাটের স্থায়িত্ব তেমন হয় না মাঝখান থেকে সরকারি অর্থের অপচয় হয়। অন্যদিকে, সাধারণ যাত্রীদের কপালে আরো দুর্ভোগ বেড়ে চলে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি চরম গরমে দাঁড়িয়ে থাকে বিভিন্নস্থানে। এ যেন গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতোই অনেকটা।
ঈদ যাত্রায় ঘরমুখী মানুষের নিরাপদ ও আরামদায়ক ঘরে ফেরার ক্ষেত্রে তাই প্রশাসনের ভ‚মিকা অনন্য। আমরা চাই, কোন অনিয়ম নিয়মে পরিণত হওয়ার আগেই সরকার এ বিষয়ে আরো ভ‚মিকা রাখবেন। ঘরে ফেরা মানুষের ঈদ যাত্রা হোক আনন্দ দায়ক।