দেশে প্রতিবছর ঈদুল আজহায় বিপুলসংখ্যক পশু কুরবানি হওয়ায় ট্যানারি শিল্পের প্রধান কাঁচামাল চামড়া দেশেই পাওয়া যায়। দেশীয় পশুতেই এখন পূরণ হচ্ছে কুরবানির চাহিদা। এটি এ শিল্পের জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট সন্দেহ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, এ চামড়ার একটি অংশ পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার হয়ে যায়। এবারও এমন আশঙ্কা করছেন ট্যানারি শিল্পের উদ্যোক্তারা।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কমবেশি ১ কোটি ২৫ লাখ পিস পশুর চামড়া সংগ্রহ হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ চামড়ার বাজার ঘিরে কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা টার্নওভার হবে, এমনটিই প্রত্যাশা। চামড়া শিল্প দেশের প্রধান রফতানি খাতগুলোর একটি। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে রাষ্ট্র। সারা বছরের পশুর চামড়ার মোট সংগ্রহের ৫০ শতাংশ আসে কুরবানি থেকে। কাজেই বোঝাই যাচ্ছে, কুরবানির পশুর চামড়ার সঙ্গে শুধু চামড়া শিল্প নয়, দেশের সার্বিক অর্থনীতির স্বার্থ জড়িত। বিশেষ করে ডলার ও অর্থনৈতিক সংকটের এ সময়ে দেশের অন্যতম এই রফতানি খাতের স্বার্থরক্ষা অত্যন্ত জরুরি। তাই চামড়া পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প নেই।
জানা গেছে, চামড়া পাচার হতে পারে এমন ১৯টি সীমান্ত রুট চিহ্নিত করে এ তালিকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠকও হয়েছে। চামড়া পাচার রোধে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত রুটগুলোয় নিয়মিত নজরদারি প্রয়োজন অবশ্যই। পাশাপাশি আরও একটি বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। সেটি হলো কুরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। অতীতে ট্যানারি ও আড়তদারদের কারসাজিতে সরকারের বেঁধে দেওয়া চামড়ার মূল্য কার্যকর হয়নি। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, ন্যায্যমূল্য না পেয়ে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা, নদী-নালা বা রাস্তায় ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। চামড়া ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত অর্থ না পেলে চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার বিষয়টিও মাথায় রাখা প্রয়োজন সংশ্লিষ্টদের। অতীতের মতো এবার যাতে চামড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কোনোরকম কারসাজি করতে না পারে সেজন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
কুরবানির চামড়া ন্যায্যমূল্যে বিক্রি না হলে সাধারণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন যারা চামড়ার টাকার প্রকৃত হকদার। তারা হলেন দেশের হতদরিদ্র মানুষ। প্রকৃত মূল্য না পাওয়ার কারণে চামড়ার একটি বড় অংশ নষ্ট করে ফেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামগ্রিকভাবে চামড়া শিল্প। আমাদের রপ্তানি পণ্যের খাত সীমিত। কাজেই কারও কারসাজির কারণে চামড়া শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।