থামছে না পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি, বরং দিন দিন বেড়েই চলছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা। এর আগে ফেঞ্চুগঞ্জে পাহাড়ধসে ১০টি পরিবারের ঘর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। পরিতাপের বিষয় হলো, এরপরও কারও টনক নড়ছে না। সিলেটে পাহাড়ের পাদদেশে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে লাখ লাখ মানুষ। পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে তারা।
শুধু সিলেট নয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ, পার্বত্য জেলাশহরগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় কমবেশি টিলা-পাহাড়ে যথেচ্ছভাবে বসিত গড়ে উঠছে, এতে বাড়ছে পাহাড়ধস ও হতাহতের ঘটনা। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, এতে পাহাড়-টিলাধসে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটবেই। প্রশ্ন হলো, ঝুঁকি জেনেও মানুষ কেন পাহাড়ে বসতি গড়ছে? এর একটি কারণ বসতি জমির সীমাবদ্ধতা। তবে কিছু সুবিধাভোগী পাহাড় দখল করে ব্যবসাও করছে। চট্টগ্রামের কিছু পাহাড় কেটে আবাসিক ভবন নির্মাণ করে বিক্রির খবরও পত্রিকায় উঠে আসছে।
সিলেটে সাবেক এক কাউন্সিলর ৫০-৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে লোকজনের কাছে টিলার জমি বিক্রি করে বসতি নির্মাণের সুযোগ দিয়েছেন বলে খবরে প্রকাশ হয়। এখনো প্রতি রাতে চলে টিলা কাটা, চলে নতুন করে বসতি স্থাপনের প্রক্রিয়া। ভয়ে কেউ প্রতিবাদও করেন না। প্রশাসনও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নির্বিকার থাকে। প্রশাসনের উদাসীনতা, রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের লেজুড়বৃত্তি, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করাসহ সমন্বিত উদ্যোগ না থাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী বাড়ছে। অথচ এভাবে বসতি স্থাপনের ফলে কিছু লোক লাভবান হলেও দরিদ্র মানুষ এর খেসারত দিয়ে চলছে প্রতিনিয়ত। সঙ্গত কারণেই এই অবস্থার আশু অবসান হওয়া জরুরি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরে ২০০৭ সালের ১১ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসে মারা যান ১২৭ জন। এর মধ্যে লালখানবাজার ওয়ার্ডের মতিঝরনা এলাকায় মারা গিয়েছিল ১১ জন। পরের বছর আগস্টে একই এলাকায় মারা যান আরও ১৪ জন। ২০১৩ সালে মারা যান আরও দুজন। এর মধ্যে ছোটখাটো ধস লেগেই আছে। কিন্তু এরপরও মতিঝরনার পাহাড়ে বসতি বেড়েই চলেছে।
কথা অস্বীকারের উপায় নেই, টিলা-পাহাড়গুলো শুধু শহরের সৌন্দর্যই বাড়িয়ে তোলে না, উপরন্তু এগুলো সংশ্লিষ্ট এলাকার বাস্তুতন্ত্রের অংশও। পাহাড়ের টানে বাড়ে পর্যটন শিল্প। কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে এবং অজ্ঞতার কারণে একদিকে ঘটছে টিলা-পাহাড় কাটা, অন্যদিকে ধসে অহরহ ঘটছে হতাহতের ঘটনা। এ অবস্থায় অবৈধ বসতির অবশ্যই অবসান হওয়া জরুরি। পাশাপাশি পাহাড় সুরক্ষায় দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে তৎপর হবেন- এটাই প্রত্যাশা।