ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

6

দেশের ব্যাংকিং খাত খেলাপি ঋণের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে ক্রমেই ন্যুব্জ হয়ে পড়ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। আইএমএফ থেকে ঋণপ্রাপ্তির শর্তের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়টিও রয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি হওয়া ঋণের পরিমাণ কমানোর বিষয়ে জোর তাগিদ দিয়ে আসছে সংস্থাটি। তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমার চেয়ে উল্টো বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এতদিন দেশের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ নিয়ে শীর্ষে ছিল সোনালী ও জনতা ব্যাংক। এবার প্রথম শীর্ষ খেলাপির তালিকায় উঠে এসেছে অগ্রণী ব্যাংক। এ অবস্থা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। ব্যাংক খাতে নতুন রেকর্ড গড়েছে খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে এত পরিমাণ ঋণখেলাপি হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই ১০ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেড়েছে। গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেকই এখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ফেরত না পাওয়া ঋণের পরিমাণ ৫৭ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। এ ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশই এখন খেলাপি। আর রাষ্ট্রায়ত্ত তিন বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। দেশে কার্যরত বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৪১ কোটি টাকা। বাকি ৬৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ তৈরি হয়েছে দেশের বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং সঠিক উদ্যোক্তাকে না দিয়ে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়ার কারণেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে দেশে বিনিয়োগ কম। অন্যদিকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে শিল্প স্থাপন করেও উৎপাদনে যেতে পারছেন না। আবার চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস-বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংকিং খাতে বড় সমস্যা সুশাসনের অভাব। এ কারণেই ব্যাংক থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে ঋণ। দুর্নীতির মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণই পরে খেলাপি হচ্ছে। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ কঠোর হচ্ছে না। যেসব ব্যাংকার দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও সব উচ্ছ¡াস থেমে যায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা, সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বাড়বে। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি ও নজরদারি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে দ্রæত পদক্ষেপ না দিলে দেশের ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। খেলাপি ঋণের বিস্তার রোধে এবং অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।