কাজিরবাজার ডেস্ক
আগামী অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য নতুন অর্থবছরে আসছে পিপিপির ৭৯টি উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের একটি তালিকা যুক্ত করা হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে প্রয়েজন হবে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। পিপিপির তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলোর একটি হচ্ছে- সিলেটে পাঁচ তারকা মানের হোটেল ও পর্যটন কমপ্লেক্স তৈরি প্রকল্প।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক অর্থবছরেই যে এসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে বিষয়টি এমন নয়। যেসব প্রকল্প পিপিপি’র মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত সরকার নির্ধারণ করেছে সেটিই প্রকাশ করা হচ্ছে। এখান থেকে কোনো বেসরকারি উদ্যোক্তা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হলে পিপিপি অথরিটির মাধ্যমে সেই প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের জানিয়েছেন, এডিপিতে যুক্ত হতে যাওয়া পিপিপি একাধিক কর্মকর্তা প্রকল্পের মধ্যে অনেকগুলোর কার্যক্রম বেশ সিলেটে হবে পাঁচ তারকা হোটেল-পর্যটন কমপ্লেক্স এগিয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি প্রকল্প রয়েছ প্রকিউরমেন্ট পর্যায়ে। এছাড়া চুক্তি স্বাক্ষর পরবর্তী শর্ত প্রতিপালনাধীন পর্যায় রয়েছে সাতটি, অপারেশনাল পর্যায়ে দু’টি, বিস্তারিত সমীক্ষা চলছে ২৭টি এবং চুক্তি স্বাক্ষর পর্যায়ে রয়েছে একটি প্রকল্প। আরও আছে নির্মাণাধীন পর্যায়ে সাতটি, অপারেশনাল পর্যায়ে একটি, পরামর্শক নিয়োগ পর্যায়ে পাঁচটি এবং নীতিগত অনুমোদন পরবর্তী প্রাথমিক পর্যায়ে আছে ১০টি উন্নয়ন। অন্যতম হলো- আপগ্রেডেশন ঢাকা-বাইপাস চার লেন সড়ক (মদনপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-জয়দেবপুর) প্রকল্প। এটির ব্যয় ধরা হয়েছে৩ হাজার ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বর্তমানে নির্মাণাধীন পর্যায়ে আছে। এছাড়া হাতিরঝিল-রামপুরা-বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ-আমুলিয়া-ডেমরা হাইওয়ে সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, ব্যয় হবে ২ হাজার ২১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এটি রয়েছে চুক্তি স্বাক্ষর পরবর্তী শর্ত প্রতিপালনাধীন পর্যায়ে। গাবতলী-সাভার-নবীনগর সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ব্যয় হবে ২ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা, এটির বিস্তারিত সমীক্ষা চলমান। কক্সবাজারে সমন্বিত পর্যটন গ্রাম তৈরির জন্য ব্যয় হবে ৮৫০ কোটি টাকা, এটি চুক্তি স্বাক্ষর পর্যায়ে রয়েছে। খুলনা খানজাহান আলী বিমানবন্দরের উন্নয়নে ব্যয় হবে ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা, প্রকল্পটি বিস্তারিত সমীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে।
সূত্র জানায়, গত বছর সর্বশেষ প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পি-ি পপির পরিবেশ তুলনামূলক বাংলাদেশ পরিণত (পরিপক্ক হলেও এখন আছে অনেক প্রতিবন্ধকতা। পিপিপিকে আরও গতিশীল করা এবং ব্যয় সাশ্রয়ের স্বার্থে প্রতিযোগিতামূলক নিলামে পিপিপি প্রকল্পের সংখ্যা বাড়াতে সরকারের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
সংস্থাটির ‘পিপিপি মনিটর’ শীর্ষক প্রতিবেদনের বাংলাদেশ প্রকাশনায় এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে বিনিয়োগর প্রায় ৭৬ শতাংশই জ্বালানি খাতে হয়েছে। এছাড়া বন্দর খাত পিপিপি বিনিয়োগর ১২ শতাংশের বেশি আকৃষ্ট করেছে। সরকার পিপিপি বিনিয়োগ প্রতি বছর জিডিপির ১.৮ শতাংশে পৌঁছানোর এবং পিপিপি পদ্ধতির অধীনে ৩০ শতাংশ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, কিন্তু সে লক্ষ্য এখনও পূরণ হয়নি।
পিপিপির তালিকায় থাকা কয়েকটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- সিলেটে পাঁচ তারকা মানের হোটেল ও পর্যটন কমপ্লেক্স তৈরি প্রকল্প, ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য সুউচ্চ আবাসিক ভবন নির্মাণ, পূর্বাচল নতুন শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সুউচ্চ আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন আবাসিক ভবন নির্মাণ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে যুক্ত হতে যাওয়া পিপিপি প্রকল্পগুলোর আরও আছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালন ও ব্যবস্থাপনা, ধীরাশ্রম রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন একটি নতুন কন্টেইনার ডিপো তৈরি, চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ ও আধুনিক রেলওয়ে হাসপাতাল নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পানি সরবরাহ, নারায়নগঞ্জ শহরে লাইট র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম চালুকরণ এবং ঢাকা ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পসহ ইত্যাদি।
পিপিপি’র বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের পরবর্তী অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধাপে যেতে হলে প্রচুর বেসরকারি বিনিয়োগ দরকার। সেক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম হতে পারে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনাশিপ। সরকার ইতোমধ্যেই এটি সফল করতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। আশা করা হচ্ছে আগামীতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা আরও বেশি করে এগিয়ে আসবেন। সেই সঙ্গে এডিপিতে ৩০ শতাংশ অবকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্প িিপ পণিতে নেওয়ার তাগিদ রয়েছে।