বাঁধগুলো অপসারণ করুন

22

 

হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নামে সরকারি অর্থ অপচয় ও লুটপাটের অভিযোগ বহু পুরনো। বাঁধ নির্মাণ শুরু করার এবং শেষ করার সময় নির্ধারিত থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মেনে চলা হয় না। বর্ষা শুরুর পর কাজ না করেও পুরো অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে নদীর প্রবাহ স্থায়ীভাবে আটকে দেওয়ার মতো আত্মঘাতী কাজও হচ্ছে। অথচ হাওরের নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল নদী দিয়ে নামতে না পেরে শুরুতেই ফসলের মাঠ ভাসিয়ে দেয়। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তাহিরপুর উপজেলার বৌলাই নদীটি খনন করছে, যাতে নদীটির পানির ধারণক্ষমতা বাড়ে এবং ঢলের পানি সহজেই নদী দিয়ে নামতে পারে। অন্যদিকে একই সরকারি সংস্থা সম্প্রতি উপজেলার মনাই ও সুরমা নদীর ওপর আড়াআড়িভাবে বাঁধ নির্মাণ করে নদী দুটির পানিপ্রবাহ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। উপজেলার অন্তত পাঁচটি নদীতে এমন সাতটি বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সব কটি নদী সীমান্তের ওপারের পাহাড়ি এলাকা থেকে এসেছে। প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে অনেক বালু ও পলি এসে নদীগুলো ভরাট করছে। নিয়মিত খননের অভাবে নদীগুলো প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। তাই এসব নদী ঢলের পানি ধারণ করতে পারে না, তখন দুক‚ল উপচে পানি ফসলের মাঠে ছড়িয়ে পড়ে। তাই নদীগুলোর পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পানিপ্রবাহের পথ সুগম করা অত্যন্ত জরুরি। সেই কাজটি শুরু করেছে পাউবো। কিন্তু একই সঙ্গে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে নদী মেরে ফেলার এমন আত্মঘাতী অপচেষ্টা কেন? জানা যায়, সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) নামের একটি বেসরকারি সংস্থাও কালাগাঙ নদীতে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করেছে। আমরা অবাক হই, নদী হত্যার শামিল এমন উদ্যোগ তারা নিতে পারে কিভাবে? নদী রক্ষায় প্রশাসনের কি কোনো ভ‚মিকা নেই?
স্থানীয়দের মতে, নদ-নদীর ওপর নির্মিত এসব বাঁধ ফসল রক্ষায় কোনো ভ‚মিকা রাখে না, বরং বন্যার সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয়। শুষ্ক মৌসুমে সেচের সংকট তৈরি হয়। পাশাপাশি এলাকার মৎস্যসম্পদের ওপরও এসব বাঁধের অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। নষ্ট হচ্ছে হাওরের জীববৈচিত্র্য। জানা যায়, শুধু কালাগাঙ নদীর ওপর বাঁধের কারণে আশপাশের তিনটি হাওরে নিয়মিত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফসলের ক্ষতি হয়। এই বাঁধটি নির্মাণ করা হয় ২০০২ সালে। প্রতিবছর পাউবো বাঁধটি মেরামতও করছে। বর্তমানে বাঁধটির ওপর অর্ধশতাধিক দোকান ঘর স্থাপিত হয়েছে। এই বাঁধের দেড় কিলোমিটার উত্তরে একই নদীর ওপর আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে ২০১২ সালে। ফলে নদীটি এখন মৃতপ্রায়।
আমরা মনে করি, নদীর ওপর নির্মিত বাঁধগুলো অবিলম্বে অপসারণ করা হবে। খননের মাধ্যমে নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে। একই সঙ্গে সরকারি অর্থের অপচয় ও নদী হত্যার জন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।