পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিন

21

 

কয়েকদিন ধরে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ৩৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম আবার রেকর্ড গড়েছে। আমরা জানি, রসনাবিলাসের জন্য পেঁয়াজের গুরুত্ব অপরিসীম। রন্ধনশিল্পে পেঁয়াজ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিদিনের রান্নায় পেঁয়াজের জোগান জরুরি। ৩৫ টাকার পেঁয়াজ কী করে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি। এমন অবস্থায় কয়েকদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। রোববার দুপুরে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত সভায় কৃষি সচিব এ তথ্য জানান। সচিব বলেন, কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা দেশের অভ্যন্তরে পেঁয়াজের বাজার সব সময় মনিটর করছি। এই মুহ‚র্তে বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি।
উল্লেখ্য, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুত রয়েছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। এত পেঁয়াজ মজুত থাকা সত্তে¡ও পেঁয়াজের দাম কেন এক মাসের মধ্যে দ্বিগুণ হলো।
বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল পেঁয়াজ চাষের জন্য চাষিদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। আর বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। আমরা দীর্ঘদিন থেকেই লক্ষ্য করে আসছি, আমদানিকৃত পেঁয়াজের আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের কৃষক পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পান না। অন্যদিকে, প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ পচে নষ্ট হয়ে যায়। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষের এখন করুণ অবস্থা। তারা এখন আর পেঁয়াজ খেতে পারছে না। যদি পেয়াজের দাম ১০০ টাকার উপরে চলে যায় তবে মধ্যবিত্ত পরিবার পেঁয়াজ খাওয়া বাদ দেবে। কিন্তু এটা কোনো যৌক্তিক সমাধান নয়। এসব হচ্ছে বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি। এরা জনগণের স্বার্থের দিকে নজর দেয় না। এরা বাজার সন্ত্রাসী। কীভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে দ্রম্নত ধনী হবে এটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। তারা একেক সময় একক অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়ায়। তাদের অজুহাতের শেষ নেই। আরও অবাক ব্যাপার, বাংলাদেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে আর আগের অবস্থায় ফিরে যায় না। ফলে তাদের কাছে দেশের অসহায় জনগণ জিম্মি হয়ে পড়ে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্য আর কতদিন চলবে। এমন অরাজক পরিস্থিতির দ্রম্নত অবসান জরুরি।
তবে সবার আগে অসৎ ও অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে।