কাজিরবাজার ডেস্ক :
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম বিচারককে জানিয়েছেন যেসব অভিযোগে মামলা হয়েছে, তা সবই সত্য। রবিবার ঢাকা সিএমএম আদালতে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের শুনানির সময় মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীকে এ কথা বলেছেন তিনি।
রবিবার সাহেদের অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের চার মামলার রিমান্ড শুনানির পর আদালত ২৮ দিনের এবং তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানটির এমডি মাসুদ পারভেজের তিন মামলায় ২১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন একই বিচারক।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাহেদ ও মাসুদকে আদালতে হাজির করে হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রিমান্ড শুনানির জন্য আদালতে ওঠানো হয়। সাহেদের চার মামলায় ১০ দিন করে ৪০ দিন এবং মাসুদের তিন মামলায় ১০ দিন করে ৩০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান ও হেমায়ত উদ্দিন খান হিরন রিমান্ডের পক্ষে এবং আসামিপক্ষে এডভোকেট নাজমুল হোসেন, শাহ আলম ও মনিরুজ্জামান রিমান্ড বাতিল করে জামিন চেয়ে শুনানি করেন।
শুনানির একপর্যায়ে সাহেদ আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বিচারককে বলেন, ‘আমি তো অন্যায় করেছি। সব অপরাধের সাথে আমি জড়িত। যারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাদের সব টাকা-পয়সা পরিশোধ করে দেবো।’
সাহেদ বলেন, ‘গত ১২-১৩ দিন ধরে আমি কী অবস্থার মধ্যে আছি। আমি আর পারতেছি না। প্রেশারের মধ্যে আছি। আমি অসুস্থ।’ এ সময় ঈদের পর রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য করার প্রার্থণা জানান সাহেদ।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এর বিরোধীতা করে বলেন, ‘বিনা টাকায় করোনা পরীক্ষা করার কথা থাকলেও আসামি রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। সে একজন মহাপ্রতারক। অসুস্থ না হয়েও গত ১৬ জুলাই আদালতে সে নিজেকে করোনা রোগী দাবি করে। পুলিশ তার যে রিমান্ড চেয়েছে আমরা তা মঞ্জুরের প্রার্থণা করছি।’ এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে সাহেদের চার মামলায় সাত দিন করে ২৮ দিন এবং মাসুদের তিন মামলায় সাত দিন করে ২১ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান জানান, সাহেদ সব অন্যায় ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন। যারা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাদের টাকা পয়সা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন সাহেদ।
গত ১৬ জুলাই সাহেদ ও মাসুদ পারভেজের ১০ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সেদিন ওই মামলায় রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। একই আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ১৬ জুলাই প্রতারণার মামলায় সাহেদকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর গত ২১ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সাহেদের মামলার তদন্তের দায়িত্ব র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) দেওয়া হয়।
গত ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেফতার করে র্যাব। এর আগে ৬ জুলাই পরীক্ষা ছাড়াই করোনার সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাহেদের মালিকানাধীন উত্তরা ও মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখায় অভিযান পরিচালনা করেন র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত।