কাজিরবাজার ডেস্ক :
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর আবহাওয়া অধিদফতরও জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি বা দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এই পূর্বাভাস দিয়েছে। রবিবার (৪ জুলাই) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কমিটির নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধিদফতরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন।
বিশেষজ্ঞ কমিটির চলতি মাসের পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জুলাই মাসে বাংলাদেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে যার মধ্যে একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
জুলাই মাসে ভারি বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অপরদিকে দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদী আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জুন মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে জানিয়ে সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, সিলেট ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের কম এবং অন্যান্য বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
জুন মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল বলেও জানান আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক।
আবহাওয়ার জুলাই মাসের প্রতিবেদনে জুন মাসের অবস্থা তুলে ধরে বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) ৫ জুন মিয়ানমারের ইয়াংগুন উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়। ৬ জুন তা চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের পূর্বাংশ পর্যন্ত অগ্রসর হয় এবং ১১ জুন তা (মৌসুমি বায়ু) সারাদেশে বিস্তার লাভ করে।
সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ৫ থেকে ৭, ১৫ থেকে ২০ এবং ২৯ থেকে ৩০ জুন দেশের অনেক স্থানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হয়। এ সময় (৩০ জুন) এ মাসের দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত (২১৬ মিলিমিটার) চট্টগ্রামে রেকর্ড করা হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, গত ১১ জুন সকাল ৬টায় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। যা পরবর্তী সময়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ১৪ জুন ভারতের বিহার এলাকায় অবস্থান নেয়। এরপর এটি স্থলভাগের উপর দিয়ে একই দিকে আরও অগ্রসর হয়ে ১৫ জুন ভারতের ঝাড়খন্ড ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান নেয় এবং পরবর্তী সময়ে এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে মৌসুমি অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়।
পশ্চিমবঙ্গ ও কাছাকাছি এলাকায় তাপীয় লঘুচাপ অবস্থান করায় ৪ থেকে ৭ জুন খুলনা, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ (৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বয়ে যায়। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস যশোরে (৬ জুন) রেকর্ড করা হয়।
অধিদফতর জুন মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতির বিষয়ে আরও জানায়, বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি থাকায় গত ৫ জুন দেশের বিভিন্ন স্থানে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া এবং বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হয়। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার চট্টগ্রামে রেকর্ড করা হয়।