কাজির বাজার ডেস্ক
প্রচÐ খরতাপে খাল-বিল, হাওর, নদীনালা সবই শুকিয়ে যাচ্ছে। পুকুরের পানি দু-তিন ফুট নিচে পর্যন্ত গরম অনুভ‚ত হচ্ছে। ফলে হাওরে মাছের প্রজনন নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। হাওরপাড়ের প্রবীণরা বলছেন, এভাবে আরও কয়েক দিন তাপদাহ অব্যাহত থাকলে হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে পোনা ছাড়া যাবে না। ফলে আকাল দেখা দেবে মাছের।
দিরাইয়ের রাজানগরের বাসিন্দা প্রবীণ কৃষক ও রাজনীতিবিদ আবদুস ছাত্তার জানান, তিনি বাড়ির একটি পুকুরে শিং, কই প্রভৃতি মাছ জিইয়ে রাখেন নিজের খাওয়ার জন্য। গরম বেশি পড়ায় এবার পোনাও নেই, মাছের কোনো নড়াচড়াও নেই। খাল-বিল সব শুকিয়ে যাচ্ছে। বৈশাখের ২০ তারিখের পর গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষ হাওরে পোনা ধরতে বেরোতেন। এসব পোনা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার বিক্রি করতে পারতেন কেউ কেউ। এই সময়ে মাছের এমন আকাল ২০-৩০ বছরেও দেখেননি তিনি। তিনি জানান, তাঁর গ্রামের পাশের বেতইর নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। গরুকে পানি খাওয়ানোর জন্যও আধা কিলোমিটার দূরে যেতে হয়।
জগন্নাথপুরের মৎস্যজীবী সাধন বর্মণ জানান, হাওরের তলানির ধানও এবার হারভেস্টার যন্ত্র দিয়ে কেটেছেন কৃষকরা। এক ফোঁটা পানিও নেই এখন হাওরে। ডোবা-নালায় যেখানে সামান্য পানি আছে, ডিমওয়ালা মাছ সেখানে লুকিয়ে আছে। চাষের মাছ ছাড়া কোনো মাছ নেই বাজারে। সুনামগঞ্জ পৌর কিচেন মার্কেটে গিয়ে হাওর- নদীর কোনো মাছ দেখা যায়নি। বিক্রেতারা জানালেন, চাষের মাছই জেলা শহরের মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ী সুসেন বর্মণ জানান, বাজারে নদী ও হাওরের মাছ আসছে না বললেই চলে। চাহিদার ১০ ভাগের এক ভাগ মাছও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। নদীর এক কেজি ওজনের কয়েকটি কালিয়ারা মাছ বুধবার সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন তাঁরা। বাজারে দুই কেজি ওজনের নদীর একটি রুই উঠেছিল। ১ হাজার ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। কাচকি মাছ বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। নদীর একটি কাতল বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। পুকুরের কাতল, রুই এক-দুই কেজি ওজনের বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে। পুকুরের কার্প-মৃগেল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পুকুরের মাছের মধ্যে কিছু মাছ দিরাই উপজেলা থেকে এসেছে, বাকিগুলো রাজশাহী অঞ্চলের।
সুসেন বর্মণ বলেন, নদী-হাওরে পানি না এলে মাছ পোনা ছাড়বে না। আগামী ছয়-সাত দিনের মধ্যে পানি আসা জরুরি। ডিমওয়ালা মাছ পানির নিচে, মাটির নিচে লুকিয়ে আছে। নতুন পানি আসতে বিলম্ব হলে এমন মাছের ক্ষতি হতে পারে।
সিলেট মৎস্য অফিসের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সীমা বিশ্বাস বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় হ্যাচারিতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে পুকুরের মাছের কিছুটা সমস্যা হয়। অথচ বুধবার হাওরাঞ্চলে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। এভাবে চলতে থাকলে অগভীর পুকুরে মাছের সমস্যা হবে। বাজারে মাছের দাম বেশি হলেও খরতাপের কারণে মাছচাষিরা বিপদের মধ্যে আছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামছুল করিম বলেন, যত তাড়াতাড়ি হাওর এলাকায় পানি আসবে, মাছের বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। ১০ দিনের মধ্যে পানি আসা জরুরি। পানি চলে আসার পর খরা হলে ক্ষতি হবে না। খাল-বিলের সামান্য পানিতে কোনোভাবে বেঁচে আছে মাছ। এভাবে অব্যাহত থাকলে ডিমওয়ালা মাছের ক্ষতি হবে।