বর্জন ঘোষণার পরও প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি নেতারা

17

 

কাজির বাজার ডেস্ক

আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তের মধ্যেও মেয়র ও কাউন্সিলর পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থকরা। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হচ্ছেন তাঁরা। মেয়র পদে বড় পদধারী নেতারা নির্বাচনে না গেলেও তাঁদের পরিবারের সদস্য কিংবা পদহীন নেতারা নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি। তিনি কারান্তরীণ বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে এবং বিগত নির্বাচনে বিএনপিদলীয় মেয়র প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা। রনি দলের কোনো পদে নেই। অবশ্য গাজীপুর সিটির ৫৭টির মধ্যে অধিকাংশ ওয়ার্ডেই বিএনপির পদধারী নেতা ও সাবেক নেতারা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন।
অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ সিটি নির্বাচনে বিএনপি কিছুটা কৌশলী ভ‚মিকাও নিতে পারে। প্রকাশ্যে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার জাতীয় রাজনীতির নীতিগত সিদ্ধান্ত অটুট থাকছে। আবার মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে দলীয় পদবিহীন বিএনপি নেতার ছেলেকে ‘মৌন সমর্থন’ দিয়ে নির্বাচনী মাঠ দখলের কৌশলও নিয়ে থাকতে পারে। রাজনৈতিক মাঠে এ ধরনের কৌশল হতেই পারে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। তাঁরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে দল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে বলেছেন, বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী না থাকলেও ‘ঘোমটা পরে’ ইতোপূর্বে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই তাদের প্রার্থী ছিল। এই ঘোমটা পরা প্রার্থী কিন্তু এবারের সিটি নির্বাচনেও থাকবে।
দলীয় সূত্রের দাবি, সিটিগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে বিএনপির। গত মঙ্গলবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পাঁচ সিটিতে নির্বাচনের বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে, কোনো ‘কৌশলের আশ্রয়’ নিলে তাঁর বিরুদ্ধে এবং কেউ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নেপথ্যেও সম্পৃক্ত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতাও জানান, বৈঠকে নেতারা সবাই একবাক্যে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন। তবে কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করার আগে তিনি যাতে প্রার্থী না হন, সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন। দল থেকে তাঁদের বোঝানো হবে। বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছে। আন্দোলনের মাঝপথে নির্বাচনে প্রার্থী হলে দলের কী ক্ষতি হতে পারে, এর আগের নির্বাচনগুলোতে প্রার্থী হয়ে কে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সে বিষয়গুলো তুলে ধরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করা হবে। তার পরও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের পদধারী কোনো নেতা ইন্ধন দিলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওই নেতা।
অবশ্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের এমন ‘কঠোর অবস্থানের’ মধ্যেও বিএনপি ঘরানার প্রার্থীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা বলছেন, দল থেকে ‘মৌন সমর্থন’ নিয়েই তাঁরা প্রার্থী হচ্ছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে সরকার শাহ নূর ইসলাম বলেন, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য দলের কোনো চাপ আসছে কিনা- জানতে চাইলে বলেন, চাপ তো পাচ্ছিই না; বরং দল মৌন সমর্থন দিচ্ছে।
একইভাবে বরিশাল সিটির বিএনপি-দলীয় সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন জানান, দল থেকে তাঁকে কোনো চাপ দেওয়া হচ্ছে না। তিনি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। খুলনা ও বরিশালে ১৬ মে এবং রাজশাহী ও সিলেটের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৩ মে। গাজীপুরে আগামী ২৫ মে, খুলনা ও বরিশালে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেটে ২১ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়র প্রার্থীর মতো গাজীপুরের ৫৭টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ স্থানেই বিএনপির বর্তমান পদধারী, সাবেক নেতা ও সমর্থক হিসেবে পরিচিতরা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ২০২২ সালে বিএনপি নেতা নারায়ণগঞ্জে তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জে ও মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলে দল তাঁদের বহিষ্কার করে। এ বহিষ্কার সবচেয়ে কঠিন পদক্ষেপ এবং শীর্ষ নেতারা এটি এড়ানোর চেষ্টা করছেন। এ ধরনের পদক্ষেপ চলমান আন্দোলনেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এ জন্য দলের হাইকমান্ড আরেকটু সময় নিয়ে তাঁদের নির্বাচন থেকে সরানোর চেষ্টা করবে।
গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শওকত হোসেন বলেন, তাঁরা দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন। এ সরকারের অধীনে যাঁরাই নির্বাচনে যাবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত হবে। দলের এমন অবস্থানের কারণে বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই বিএনপি সমর্থিতরা মনোনয়ন জমা দেননি। যাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যাহার করবেন বলেও তিনি আশা করছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরকার নতুন করে সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রে মেতেছে। যখন বিএনপি সরকারবিরোধী চ‚ড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছে, ঠিক তখনই সিটি নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন করছে সরকার। অর্থাৎ সিটি নির্বাচন হবে তথাকথিত নির্বাচন। এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলের কেউ নির্বাচনে গেলে তাঁকে বহিষ্কার করা হবে। এর আগেও দুই সিটির মেয়র প্রার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এবার মেয়রদের সঙ্গে কাউন্সিলরদেরও সতর্ক বার্তা দিচ্ছে বিএনপি।