শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বøাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েকশ কৃষকের জমির পুরো ধানই নষ্ট হয়ে গেছে। ব্রি-২৮ জাতের এসব নষ্ট হওয়া ধান কেউ গরুর জন্য কেটে নিচ্ছেন, কেউ জমিতেই ফেলে রেখেছেন। এতে নিজেদের পরিবারের খাবার জোগানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে কৃষকরা বলছেন, বাজারে বীজ ঘরগুলোতে গেলে উচ্চ ফলনশীল বলে তারা এ ধান তাঁদের কাছে বিক্রি করে।
শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরের বোরো চাষি ইউছুপ মিয়া বলেন, তিনি হাওরের নিচু অংশে ১৫ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। ধান যখন পাকতে শুরু করছে, তখন লক্ষ্য করেন তাঁর জমির সব ধান চিটা। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়েও কোনো কাজ হয়নি। তিনি জানান, তাঁর নিজের গ্রাম ইউছুপুর, পার্শ্ববর্তী নোয়াগাঁও, রাজাপুর ও উত্তরভাড়াউা গ্রামের কয়েকশ কৃষকের শত শত একর জমির বোরো ধান চিটা হয়েছে।
একই গ্রামের কৃষক জোবায়ের মিয়া তাঁর জমির ধান দেখিয়ে বলেন, ব্রি-২৮ ধানের আবাদে তাঁরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে ১২ কিয়ার জমি চাষ করেছিলেন। সবই শেষ। এবার চাল কিনে খেতে হবে।
নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক অঞ্জু কর জানান, নিজের জমি নেই। সাত বিঘা জমি বর্গা চাষ করেছেন। মানুষের কাছ ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। সদর উপজেলার লুকড়া গ্রামের কৃষক মো. তাহের হোসেন। নিজের জমি নেই। অন্যের জমি টাকার বিনিময়ে বর্গা নিয়ে আবাদ করেন। এ বছর ৩ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেছিলেন। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি।
কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ। ৩ বিঘা জমি চাষ করেছিলাম। কোনো জমিতেই একগোটা ধানও হয়নি। আমি পরিবার নিয়ে কীভাবে চলবো। মো. ফরিদ উদ্দিন নামে এক কৃষক জানান, তাদের হাওরে প্রায় ২ হাজার বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ ধান এখন গরুকেও খাওয়ানো যাবে না। গরু এসব খায় না। এগুলো কেটে নিয়ে পোড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মো. জোয়াদ আলী নামে অপর এক কৃষক বলেন, আমরা ৯৫ ভাগ মানুষ হাওরে ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ করি। এটির ফলনও ভালো হয়। এবার ১ শতাংশ ধানও হয়নি। সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমরা কিভাবে খাবার যোগাড় করবো তা ভেবে পাচ্ছি না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, এমনিতে জেলার আবহাওয়া ভালোই ছিল। কিন্তু ১৫-২০ দিন আগে হঠাৎ করেই দিনের তাপমাত্রা বেড়ে ৩২-৩৩ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়। আর রাতে তাপমাত্রা কমে ঠান্ডা হয়। ফলে ব্রি-২৮ জাতের ধানে বøাস্ট ডিজিজের প্রকোপ দেখা দেয়। উপজেলা থেকে বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক নাটিবো এবং ট্রোপার এর মধ্যে যেকোনো একটি ছত্রাকনাশক দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করা এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, হাওরে কৃষকরা ধান লাগিয়ে আসার পর তেমন একটা যতœ নেন না। একেবারে কেটে নিয়ে আসেন। এ পর্যন্ত বøাস্ট রোগে জেলায় ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে।