মঙ্গলবার পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে প্রথমবারের মতো ট্রেন চলেছে। পাঁচটি বগিবিশিষ্ট পরীক্ষামূলক এই বিশেষ ট্রেনটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পৌঁছে। এদেশের রেল যোগাযোগের ইতিহাসে এই প্রথম মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে ট্রেন চলল। স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি করল আরেকটি মাইলফলক। স্বভাবতই এ ঘটনায় এই অঞ্চলের মানুষ বিশেষভাবে আনন্দিত, উচ্ছ¡সিত।
বস্তুত এর মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় রচিত হলো এক নতুন অধ্যায়। ভাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রেনটি যাত্রীসহ চলাচল শুরু করবে আগামী সেপ্টেম্বরে। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উল্লেখ্য, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয় গত বছর ২৫ জুন। কিন্তু তখন এতে রেললাইন স্থাপনের কাজ বাকি ছিল। এবার রেললাইন স্থাপন এবং ট্রেন চলার মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু পূর্ণতা পেল বলা যায়।
পদ্মা সেতু বর্তমান সরকারের এক অনন্য কৃতিত্ব। সেতুটি জাতি হিসাবে আমাদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে আমাদের মর্যাদা। সবচেয়ে বড় কথা, এই সেতু বাঙালি জাতির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এই আত্মবিশ্বাস আরও অনেক বড় কাজে আমাদের প্রেরণা জোগাবে, সন্দেহ নেই। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথ চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার আরও উন্নতি হবে।
ট্রেনে একসঙ্গে অনেক মানুষ যাতায়াত করতে পারে এবং ব্যয়ও তুলনামূলক কম। ফলে কম খরচে যাতায়াত এবং দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য পরিবহণ সম্ভব হবে। দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় বিনিয়োগ হবে, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে, গড়ে উঠবে বিভিন্ন রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল ও বিনোদন পার্ক। এসবকিছুর ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে, কমবে দারিদ্র্য। এককথায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এক নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হবেন দেশের অপরাপর অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে। সুতরাং সড়ক ও রেলপথসহ পদ্মা সেতুর সামাজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। আমরা আশা করব, নির্ধারিত সময়েই অর্থাৎ আগামী সেপ্টেম্বর থেকে মানুষ এ সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবে।