স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটের গোলাপগঞ্জে বাবা ও মাকে খুনের দায়ে একজন ও সুনমগঞ্জের জামালগঞ্জে যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার দায়ে একজনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভপুর উপজেলায় এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে পৃথক আরেকটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক পৃথক আদালতে এসব রায় প্রদান করা হয়।
সিলেট : গোলাপগঞ্জে বাবা-মাকে খুনের দায়ে ছেলে আতিক হোসেন খান উরফে আতিকুর রহমান রাহেল (৩৬) নামে এক আসামিকে ফাঁসি (মৃত্যুদন্ড) দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে আরও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের সিনিয়র দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আতিকুর রহমান রাহেল সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার সুনামপুর গ্রামের আব্দুল করিম খান উরফে ঠাকুর মনার ছেলে। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নিজাম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, দন্ডপ্রাপ্তরা ৩ ভাই, ৩ বোন। বোনদের বিয়ে দেওয়ার পর ভাইয়েরা একই বাড়িতে পৃথকভাবে বসবাস করে আসছিলেন। পৈতৃক সম্পদ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাদের বাবাকে নিয়ে ৩ ভাইয়ের মধ্যে সম্পদ ভাগবাটোয়ারা করে দেন। কিন্তু মেজ ছেলে দÐিত আতিকুর রহমান রাহেল বাড়ির দক্ষিণে ৩ শতক জমি তার নিজের নামে লিখে দিতে বাবাকে চাপ সৃষ্টি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ২৭ মার্চ সকালে আতিকুর রহমান রাহেল তার পিতা আব্দুল করিম খানকে নিয়ে বাড়ির দক্ষিণে ক্ষেতের জমির পাশে লাগানো গাছবাগানে গাছপালা কাটতে নিয়ে যায়। সঙ্গে মা মিনারা বেগম পিছু নেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে আতিকুর রহমান রাহেল তার পিতাকে জমি লিখে নিতে চাপ সৃষ্টি করে। তাতে মা মিনারা বেগম বাধা দিলে আসামির হাতে থাকা কোদাল দিয়ে মাকে কোপ মারতে যায়। তখন তার বাবা আব্দুল করিম খান (৬০) এগিয়ে আসলে কোদালের (লোহার অংশ) ধারাল অংশ দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তিনি ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। এরপর মা মিনারা বেগম (৪৫) এগিয়ে আসলে তাকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
এ ঘটনায় নিহতের আরেক ছেলে দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ২৮ মার্চ একমাত্র আতিকুর রহমান রাহেলকে অভিযুক্ত করে গোলাপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) এসআর পিন্টু সরকার ২৮ মার্চ দিনগত ভোরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা সৎপুর গ্রাম থেকে আসাসি আতিকুর রহমান রাহেলকে গ্রেফতার করলে সে আদালতে হত্যাকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে জবানবন্দি দেয়। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা মিনারা বেগমও পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন। এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসার অগ্রগতি না হওয়ায় মিনারা বেগমকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর দু’দিন পরই আঘাতজনিত কারণে তিনিও মারা যান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) এসআর পিন্টু সরকার তদন্ত শেষে একমাত্র আসামি আতিকুর রহমান রাহেলকে ২০২১ সালের ২ ফেব্রæয়ারি আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। মামলাটি ওই আদালতে বিচারের জন্য এলে ২০২২ সালের ২০ জুন অভিযোগ গঠনের পর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানিতে ১৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় আদালত আসামি আতিকুর রহমান রাহেলকে মৃত্যুদন্ড (ফাঁসি) ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন এবং আসামি পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় স্টেড ডিফেন্স হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ।
রাষ্ট্রপক্ষের কুশলী অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন আহমদ জানান, সকল সাক্ষ্য প্রমাণে আতিকুর রহমান দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত তাকে মৃত্যুদÐাদেশ দিয়েছেন।
তবে, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান আসামি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামীকে মৃত্যুদÐ দিয়েছেন আদালত।
দÐপ্রাপ্ত মো. রাসেল মিয়া জামালগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের সফিক মিয়ার ছেলে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাকির হোসেন এ রায় দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের রেছনা বেগমের মেয়ে মনমালা বেগমের বিয়ে হয় মো. রাসেল মিয়ার সঙ্গে। বিয়ের পরে আসামি মো. রাসেল মিয়া মনমালাকে বাড়িতে নিয়ে ঘর সংসার করতে থাকে। ওই সময় প্রায়ই মো. রাসেল মিয়া স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি করে তাকে নির্যাতন শুরু করে। এ নিয়ে স্ত্রী আদালতে একটি মামলাও করেন। মামলার পর আসামি মো. রাসেল মিয়া আর যৌতুক দাবি করবে না ও নির্যাতন করবে না মর্মে অঙ্গীকার করে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী যৌতুক দাবি করে আবারও নির্যাতন শুরু করে। ২০১৮ সালের ২৮ জুন মনমালাকে স্বামীর ঘর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে মনমালার মরদেহ স্বজনরা দেখতে আসামির বাড়িতে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরে মনমালার মা বাদী হয়ে জামালগঞ্জ থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার দীর্ঘ বিচারকাজ শেষে স্বামী রাসেল মিয়ার বিরুদ্ধে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আদালত তাকে মৃত্যুদÐ দেন।
এদিকে বিশ্বম্ভপুর উপজেলায় এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে পৃথক আরেকটি মামলায় আসামি খলিল আহমেদকে যাবজ্জীবন কারাদÐ দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাকির হোসেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নান্টু রায়।