বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন সাবেক বিচারক এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ একজন প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ। কর্মজীবনে তিনি আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাচন কমিশন গত সোমবার নির্বাচনসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আগামী ২৩ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রধান। এই পদে আসীন হওয়ার জন্য যে ধরনের যোগ্যতা ও গুণাবলি থাকা প্রয়োজন তার সবই আছে মো. সাহাবুদ্দিনের মধ্যে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। একাত্তর সালে দেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা শুরু হলে তিনি ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন এবং ফিরে এসে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে তিনি পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর তিনি স্থির থাকতে পারেননি। এই হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করেন। এ জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় তাঁকে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় এবং দীর্ঘ কারাভোগ করতে হয়। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে তিনি মুন্সেফ (সহকারী জজ) পদে যোগ দেন। বিচারিক দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে তিনি জেলা দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। তিনি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব পদেও নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার নিযুক্ত হয়ে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের যেসব ঘটনা ঘটে, সেসব তদন্তে পরবর্তী সময়ে যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়, তিনি তার চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দলীয় সভাপতির মনোনয়ন পান। এ ছাড়া তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি বলেন, ‘আমি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখে যেতে চাই। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার আকাক্সক্ষা জনগণ যাদেরই নির্বাচিত করুক, তারা যেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের হয়।’ একই সঙ্গে তিনি দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বাংলাদেশের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের প্রতিটি বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত।