বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হওয়ার পরও বিশৃঙ্খলা কমেনি। অরাজকতা, যাত্রী ভোগান্তি কমেনি। কাক্সিক্ষত মাত্রায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব হয়নি। যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও সেভ দ্য রোডÑএই দুই সংগঠন বলছে, ২০২২ সালে গড়ে প্রতিদিন সড়কে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিরাপদ সড়ক চাই-এর তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ২৯ শতাংশ। গত শনিবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসে সারা দেশে মোট ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৯ জন পরিবহন চালক ও শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৩ জন চালক এবং ২৬ জন শ্রমিক।
সড়ক দুর্ঘটনা কেন ঘটছে? নিরাপদ সড়ক চাই মনে করে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাব, টাস্কফোর্সের দেওয়া ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালনা করা, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, মোটরসাইকেলচালকদের বেপরোয়া চালানো এবং মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার না করা, সড়ক, মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কে গতিসীমা নির্ধারণ না করা, চালকদের মাদকে আসক্তি, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, বিপজ্জনক ওভারটেকিং ও ওভারলোডিং, বিরতি ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালনা ইত্যাদি।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান একটি কারণ হচ্ছে কর্মঘণ্টা না মানা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত চালকের ওপর অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। চালকের গাড়ি চালনা নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার মধ্যে সীমিত রাখা হচ্ছে না। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পরিবহন শ্রমিকের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে বলেছে। আইনের ৩৯ (১) ধারায় উল্লেখ আছে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিবহন যানের চালক, কন্ডাক্টর, হেলপার-কাম-ক্লিনারদের কর্মঘণ্টা ও বিরতিকাল নির্ধারণ করতে পারবে। সেই সঙ্গে ৩৯ (২) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, নিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অথবা পরিবহন যানের চালক, কন্ডাক্টর, হেলপার-কাম-ক্লিনার উপ-ধারা (১)-এর অধীন নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও বিরতিকাল মেনে চলবে। আইন থাকলেও এর কোনো বাস্তবায়ন নেই।
প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৫৬ লাখ। সব ধরনের যানবাহন মিলিয়ে চালকের সংখ্যা ৪০ লাখের কাছাকাছি। বৈধ লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে এমন চালকদের ৩১ শতাংশ কোনো অনুমোদিত ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেনি। ফলে চালকদের বেশির ভাগই ট্রাফিক আইন ভালো জানে না। সড়ক দুর্ঘটনার এটাও একটা কারণ।
আমরা কোনো মতেই অনিরাপদ সড়ক চাই না। প্রতিদিনের মৃত্যুও কাম্য নয়। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশকে সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত করতে হলে সবার আগে চাই সদিচ্ছা। দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবেÑএটাই আমাদের প্রত্যাশা।