সিলেট রেল স্টেশন ॥ যাত্রীসেবার মান বাড়লেও কমেনি টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য ॥ ম্যানেজারের জন্য আলাদা কোনো টিকিট বরাদ্দ থাকে না এটা অনেকেই বুঝতে চান না-নুরুল ইসলাম

31

সোয়েব বাসিত :
স্টেশনের প্লাটফর্ম একেবারে ঝকঝকে তকতকে। প্লাট ফর্ম কিংবা এর আশ পাশ কোথাও কোনো হকার নেই। নেই ভিক্ষুক কিংবা অন্য কোনো উৎপাত। ট্রেনের বগি গুলোও একেবারে পরিষ্কার পরিছন্ন। ওয়াশ রুমও ঘসা মাজা। স্ট্যান্ডে রাখা আছে সাবান ও টিস্যু সহ প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী।। ট্রেন ছাড়ার আগে এসি চেয়ার ও এসি কেবিন গুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সুগন্ধি। যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামার সাথে সাথেই পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন রেল কর্মীরা। সব মিলিয়ে সিলেট রেল স্টেশনে যাত্রী সেবার মান আগের চেয়ে অনেক গুণ বাড়লেও কমেনি টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য। সিলেট রেল স্টেশনে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এরপরও বর্তমান ম্যানেজার নুরুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সেই অভিযোগ কিছুটা হলেও কমেছে।
অনুসন্ধান ও বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় কিছু লোকজনের সহযোগিতায় একটি চক্র সিলেট রেল স্টেশনকে ঘিরে টিকিট কালোবাজারি সহ নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে আছে।
এ অবস্থায় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ করে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিভিন্ন সময় ঝটিকা অভিযান চালালেও কিছুদিন স্টেশন কালোবাজারি ও দালাল মুক্ত থাকলেও এরপরই আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। আর স্থানীয় কিছু লোক নানা ভাবে এসব অপরাধের পেছনে মদদ দেয়ায় স্টেশন ম্যানেজারের একার পক্ষে এসব রোধ করা সম্ভব নয় বলে সচেতন মহল মনে করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে সিলেট থেকে প্রতিদিন ৩ জোড়া ট্রেন যাত্রী ও ১টি পণ্যবাহী ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দশ্যে ছেড়ে যায়।
এসব ট্রেনে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। আর এসব যাত্রীদের জন্য সিলেট রেল স্টেশনের কাউন্টার ৫০ ভাগও অনলাইনে ৫০ ভাগ টিকিট বরাদ্দ থাকে। কিন্তু এ প্রতিবেদক নিজেই বিভিন্ন সময় একাধিকবার অনলাইনে ঢুকার ১০/১৫ মিনিটের মধ্যই দেখা গেছে অনলাইনে সব টিকিট শেষ হয়ে গোছে।। কাউন্টারে গিয়ে মাঝে মধ্যে টিকিট মিললেও তাতেও রয়েছে নানা দুর্গতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে কাউন্টার থেকে টিকিট কালো বাজারির সাথে কাউন্টারেরই কর্মচারিরা জড়িত থাকেন। তারা যাত্রীকে “স্ট্যান্ডিং” টিকিট ছাড়া আর কোনো টিকিট নেই বললেও অন্য রাস্তায় হাঁটলে তারাই আবার সেই যাত্রীকে টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন। সিলেট রেল স্টেশনে টিকিট কালোবাজারির সাথে সবচেয়ে আগে যার নামটি আসে তিনি স্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর। রেলে যত টিকিট কালোবাজারি হয় তার অধিকাংশের সাথেই কম্পিউটার অপারেটরের হাত রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম এর সাথে দীর্ঘক্ষণ সরেজমিন অবস্থান ও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রতিদিন তার কাছে টিকিটের জন্য এত বেশি অনুরোধ আসে যা রীতিমত অবিশ্বাস্য। সরকারি বেসরকারি এমন কোনো সংস্থা বাকি নেই যাদের অনুরোধ থাকে না। সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দ সংস্থা, আইন শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট, বিচারক, জেলা প্রসাশন সবারই টিকিটের অনুরোধ থাকে। এদের বাইরে রাজনৈতিক নেতা এবং যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের বাড়তি চাপতো রয়েছেই। টিকিট না দিলে চাকরী খেয়ে ফেলা, কর্মস্থল থেকে বিতাড়িত ও বদলি সহ আরও নানা ধরনের হুমকি মোকাবেলা করতে হয় স্টেশন ম্যানেজারকে। দেখা গেছে এসব মোকাবেলা করেই বর্তমান স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
সিলেট রেল স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম এর সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজারের জন্য রেলের কোনো টিকিট আলাদা ভাবে বরাদ্দ থাকে না। শুধুমাত্র উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের জন্য একটি কেবিন বরাদ্দ থাকে। এটি মাননীয় বিচারপতি যখন যে মুহূর্তে চাইবেন তখনই দিতে হবে। এরপরও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুরোধ রাখতে গিয়ে অনেক সময় নিজের লোক দিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে দিতে হয়। এ কারণে অনেকেই মনে করে থাকেন ম্যানেজারের জন্য হয়তো আলাদা টিকিট বরাদ্দ থাকে। তিনি বলেন টিকিটের জন্য প্রতিদিন কত শত অনুরোধ আসে তা কেউ স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করবে না। তিনি বলেন এত কিছুর পরও চেষ্টা করি যাত্রীদের সেবা দেয়ার। তিনি বলেন আমি ম্যানেজার হিসাবে যোগদান করার পর স্টেশনে টিকিট কালোবাজারি আর দালালদের উৎপাত অনেক কমেছে। নুরুল ইসলাম বলেন মাঝে মাঝে টিকিটের জন্য সাংবাদিক সহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে এমন সব অনুরোধ আসে যা আমার সাধ্যের বাইরে থাকায় তা রক্ষা করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পরে। তখন অনেকেই ভুল বুঝে ক্ষেপে যান। উল্টা পাল্টা রিপোর্ট করেন। তখন আসলেই কষ্ট লাগে।