শিল্প-কারখানা, বাণিজ্যিক ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। গত বুধবার নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। নতুন দাম আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে গৃহস্থালিতে রান্নার গ্যাস, গাড়ি চালাতে ব্যবহৃত সিএনজি, সার উৎপাদন ও চা-শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে হারে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হতে পারে সরকারকে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বলেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করে বর্ধিত চাহিদা মেটাতে হবে। সে কারণে সরকার বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে আরেক দফা মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, শিল্প-কারখানার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যার প্রভাব পণ্য উৎপাদনে পড়বে। গ্যাসের দাম বাড়ার বিষয়টি ঘুরেফিরে ভোক্তার কাঁধেই পড়বে। স্টিল, সিরামিক, টেক্সটাইলসহ এ ধরনের বিভিন্ন খাতে গ্যাসের ব্যবহার বেশি, এখন এসব পণ্য উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে; যার ফলে বাড়বে দামও। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ভোক্তার ওপর পড়বে স্বীকার করে সমন্বয়ের কথা বলেছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব জনজীবনে পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ শেষ পর্যন্ত বাড়তি দামটুকু পরিশোধ করতে হবে ভোক্তাসাধারণকেই। এটা তো খুবই স্বাভাবিক, যেকোনো জিনিসের দাম বাড়লে এর প্রভাব সর্বত্রই পড়বে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবও যে জনজীবনে সমানভাবে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
এটা স্বীকার করতে হবে যে সরকারের ওপর ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসার চাপ ছিল। আবার বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মূল্য নির্ধারণের যুক্তি দিয়েছে সরকার। সরকারের এই যুক্তি যে যথার্থ, তা মানতে হবে। আর সে কারণেই গ্যাসসংকট নিয়ে গত কয়েক মাস শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। সেসব বৈঠকে ব্যাবসায়ীরা জানান, উৎপাদন খরচ বাড়লেও শিল্প বাঁচাতে বেশি দামে গ্যাস কিনতেও তাঁরা রাজি। তবে তাঁরা নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের নিশ্চয়তা চান। গত বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, গ্যাস সরবরাহে আর কোনো ভর্তুকি দেওয়া হবে না। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস চাইলে ব্যবসায়ীদের তা বিদেশ থেকে কেনা দামেই নিতে হবে।
শুধু বাংলাদেশ নয়, যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে দেশটির শিল্পের উন্নয়নের ওপর। দেশের শিল্প উন্নত ও আধুনিক না হলে যেকোনো দেশই অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। শিল্পের বিকাশে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করা হোক।