জঙ্গি সংগঠনগুলোর প্রকাশ্য কার্যক্রম তেমনভাবে না থাকলেও আড়ালে সব কিছুই আগের মতো বহাল আছে, ১৪ বছর আগে নিষিদ্ধ করা হলেও থেমে নেই জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহীরের কর্মকাÐ। ঢাকা ও ঢাকার উপকণ্ঠ গাজীপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সংগঠনটি দাওয়াতি কর্মকাÐের পাশাপাশি দেয়ালে লাগাচ্ছে সরকারবিরোধী পোস্টার। বিতরণ করা হচ্ছে সরকারবিরোধী লিফলেট।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছে জঙ্গিবাদী বই। গত রবিবার রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীর চর এলাকা থেকে সংগঠনটির শীর্ষ নেতা সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি নাফিজ সালাম উদয়কে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এর আগে গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হিযবুত তাহ্রীরের আরেক শীর্ষ নেতা এজাহার ও চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি মামুনুর রশিদ ওরফে মামুনকে গ্রেফতার করে র্যাব। তিনি হিযবুতের মিডিয়া সচিব ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে হিযবুতের মাঠ পর্যায়ে কর্মকাÐ জোরালো করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। গ্রেফতার হওয়া এই দুই হিযবুত নেতা জিজ্ঞাসাবাদে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানিয়েছেন, সংগঠনটির নতুন সদস্য সংগ্রহ করা এবং উগ্রবাদী কর্মকাÐ ছড়িয়ে দিতে তৎপর ছিলেন তাঁরা।
হিযবুতের সদস্যরা সরকার ও দেশবিরোধী নানা উগ্রবাদী কর্মকাÐে সম্পৃক্ত। গত মার্চে রাজধানীর বংশাল ও লালবাগ থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহীরের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
জঙ্গিবাদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িকতাবাদী রাজনীতি। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দীর্ঘদিন থেকেই জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর তৎপরতার কারণে জঙ্গিরা কিছুটা দুর্বল হলেও তাদের তৎপরতা থেমে নেই। ভেতরে ভেতরে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে তারা, নতুন করে নাশকতার ছক আঁটছে। জঙ্গি তৎপরতা সচল রাখতে নানাভাবে অর্থায়ন করা হচ্ছে, বিদেশ থেকে নানাভাবে টাকা আসছে। অনেক এনজিও ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে রয়েছে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগ।
আর এক বছর পর একটি জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই রাজনীতির মাঠ গরম হতে শুরু করেছে। অতীতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক উত্তাপ যখন তীব্র হয় তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে জঙ্গিবাদ। এবারও যে তার ব্যতিক্রম হবে না, সে আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। রাজনীতির মাঠে যখন প্রধান দুই রাজনৈতিক দল উত্তাপ ছড়াচ্ছে, সেই অবসরে বাংলাদেশে নতুন করে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে হিজরতের নামে বেশ কিছু তরুণের নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনায় জঙ্গিবাদের বিষয়টি সামনে এসেছে। গত ২০ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর এটা স্পষ্ট হয়েছে যে জঙ্গিরা অনেক বেশি সংগঠিত এবং নতুন করে তারা দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা তৈরি করতে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদের সর্বনাশা অপতৎপরতা থেকে বাংলাদেশ এখনো মুক্ত নয়।
জঙ্গি সংগঠনগুলো নতুন করে সংগঠিত ও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এখন আরো তৎপর হতে হবে।