কাজিরবাজার ডেস্ক :
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ অর্থনীতিতে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে দেশকে উন্নত করতে, এগিয়ে নিয়ে যেতে। তারা সেভাবেই এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সম্মেলন শুরু হয়। শুরুতে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন শেখ হাসিনা। দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী পর্বে শোকপ্রস্তাব উপস্থাপন করেন দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ওবায়দুল কাদের।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন। তিনি প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ভাষণ দেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ এইটুকু বলতে পারে, বাংলাদেশের কোনো মানুষ অভুক্ত থাকে না। তাই পিতাকে বলতে পারি, পিতা, আমরা কথা দিলাম, আপনার জনগণ কখনো অভুক্ত থাকবে না। আপনার জনগণ কষ্টে থাকবে না। আজকে আপনি নেই, আপনার আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়ে জনগণের পাশে থেকে আমরা এই জনগণকে সুন্দর জীবন দেব, উন্নত জীবন দেব, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, আমরা সেভাবেই এই দেশ পরিচালনা করব।’
বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে একটা বাধা করোনা ও যুদ্ধ। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এ জন্য আমার আহŸান, আমরা যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধ চাই না, স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) চাই না। ওগুলো বন্ধ করেন। সব দেশ স্বাধীন। স্বাধীনভাবে তার চলার অধিকার আছে। এই অধিকার সব দেশের থাকতে হবে। যুদ্ধ মানুষের ক্ষতি করে।’
যুদ্ধের ভয়াবহতা জানেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশি মেয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। এ জন্য তিনি যুদ্ধ চান না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে আহŸান করব, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করেন। তাদের উসকানি দেওয়া বন্ধ করেন। শান্তি চাই। কোভিডের অর্থনৈতিক অভিঘাত থেকে কেবল আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম। এখন এই যুদ্ধ আর স্যাংশন আমাদের সব অগ্রযাত্রা নষ্ট করছে।’
দেশবাসীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি আহŸান করেছি, সবাই যার যেটুকু জমি আছে, চাষ করেন বা উৎপাদন করেন। এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, সবজি নিয়ে কৃষি গবেষকেরা গবেষণা করছে। গবেষণা করে করে উৎপাদন বাড়াচ্ছি। উৎপাদন বাড়িয়ে আমরা আমাদেরটা খাব। আমরা কারও কাছে হাত পেতে খাব না। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের চলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সম্পদ কম। জাতির পিতা বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছেÑএই মাটি মানুষ দিয়েই দেশ গড়ব। আমরাও সেই নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা পারব। আমার দেশের মানুষের ওপর আমার আস্থা ও বিশ্বাস আছে। আর বিশেষ করে আমার আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠন যেকোনো সময় দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।’
শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হয়। বেলা তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে বসবে কাউন্সিল অধিবেশন। শুরুতে বর্তমান নির্বাহী কমিটির মুলতবি বৈঠক। এরপর নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ূনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন মঞ্চে আসবে। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা মঞ্চ থেকে নেমে সামনের আসনে বসবেন। এরপর শুরু হবে নেতা নির্বাচন। সাধারণত আওয়ামী লীগের নেতা নির্বাচিত হয় আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে। এবারও সেভাবেই হবে বলে দলের নেতারা মনে করছেন।