জাফলংয়ে নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা, আটক ৩

5

কে.এম লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে আটক করেছে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, উপজেলার মুজিব নগর গ্রামের জলিল মিয়ার ছেলে জব্বার মিয়া, একই গ্রামের বারেক মিয়ার ছেলে বাচ্চু মিয়া ও বুধিগাঁও হাওর গ্রামের হারুণ অর রশিদের ছেলে সেবুল মিয়া।
এদের মধ্য থেকে আসামী বাচ্চু মিয়া ধর্ষন এবং হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। অপর দুইজনও পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ সাংবাদিকদের জানিয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংিয়ে গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ জানান, আসামী বাচ্চু মিয়া, জব্বার মিয়া এবং সেবুল মিয়া নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতো এবং মাঝে মধ্যে ভারতীয় খাসিয়াদের বাগান থেকে সুপারি চুরি করতো। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় ছিচকে চুরিরও অভিযোগ রয়েছে।
গত ১১ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১০টার দিকে বাচ্চু মিয়া, জব্বার মিয়া এবং সেবুল মিয়া জব্বারের ঘরে বসে এক সঙ্গে ইয়াবা সেবন করে। ইয়াবা সেবনের এক পর্যায়ে তারা তিজনে মিলে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে ধর্ষন করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ি বাচ্চু, জব্বার ও সেবুল এই তিন জনে মিলে কেক, বিস্কুট এবং কোমল পানীয়র লোভ দেখিয়ে তামাবিল পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বাজার থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে স্থানীয় একটি টিলায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা তিনজনে মিলে সংঘবদ্ধভাবে ওই নারীকে পালাক্রমে ধর্ষন করতে থাকে। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী বাঁধা দিলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং লাঠি ও পাথর দিয়ে ওই নারীর মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
পরদিন সকালে স্থানীয়রা মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত ওই নারীর বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
পরে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) শেখ মো. সেলিম, গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ এবং গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে. এম. নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। একই সঙ্গে সিআইডি ও পিবিআই এর ফরেনসিক টিম অজ্ঞাতনামা নারীর পরিচয় সনাক্তের জন্য মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ঘটনার আলামত সংগ্রহ করেন।
এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানার এসআই জহিরুল ইসলাম খান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে ১২ ডিসেম্বর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সিলেটের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন এর দিক নির্দেশনায় ক্লুলেছ এই মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এমরুল কবির এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত এবং আটক করেন। এদের মধ্যে জব্বার মিয়াকে ১৫ ডিসেম্বর, বাচ্চু মিয়াকে ১৮ ডিসেম্বর আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে এবং সেবুল মিয়াকে ১৯ ডিসেম্বর রাতে আটক করা হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি পাথর খন্ড ও অজ্ঞাত মহিলার পড়িহিত কাপড় চোপড় এবং ব্যবহৃত কম্বলের পোড়া অংশ বিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে. এম. নজরুল ইসলাম বলেন, সিলেটের পুলিশ সুপার মহোদয়ের সঠিক দিক নির্দেশনায় ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে ক্লুলেছ এই হত্যাকান্ডটির রহস্য উদ্ঘাটন এবং ঘটনায় জড়িত তিন জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না এ বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গত ১২ ডিসেম্বর সোমবার তামাবিল স্থলবন্দর-সংলগ্ন মুজিবনগর এলাকার একটি টিলা থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত এক নারীর বিবস্ত্র এবং রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অজ্ঞাত ওই নারী দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় ঘুরাঘুরি করতো। রাতের বেলা তামাবিল পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বাজারে কাশের পাগলার ভাঙারির দোকানের সামনে এবং আশরাফের বাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত ঘরে রাত্রি যাপন করতো।