বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেও সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর অশুভ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা গেছে অতীতে। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে রোজার সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়।
এই বাস্তবতায় ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, আদা, ডাল, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং রমজান ঘিরে ভোগ্য পণ্য আমদানি ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এসব পণ্যের ঋণপত্র খুলতে মার্জিন ন্যূনতম রাখা হবে। রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করা হবে। বাকিতে এসব পণ্য কেনার সুযোগ থাকবে। ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেল খোলার উদ্যোগও নেওয়া হবে।
এসব উদ্যোগ পণ্য আমদানিকারকদের মধ্যে স্বস্তি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রমজানের আগে এসব পণ্য দেশে এসে বাজার ধরতে পারবে কি না? কারণ দ্রæততম সময়ের মধ্যে বিদেশি সরবরাহকারীর সঙ্গে সমঝোতা করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমদানির অনুমতি নেওয়া, ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা, পণ্য জাহাজীকরণ এবং সেই পণ্য দেশে পৌঁছে পাইকারি বাজারে সরবরাহ দেওয়া অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৫ ডিসেম্বর থেকেই যদি ঋণপত্র খোলা হয়, তাহলে রমজানের আগে তিন মাস সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু পাইকারি বাজারে রমজানের ভোগ্য পণ্য বিক্রি শুরু হয় শবেবরাতের আগে। সে হিসাবে আমদানিকারকদের হাতে সময় থাকে আড়াই মাস। তবে তদারকি থাকলে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোজ্য তেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি, খেজুরসহ আট পণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ দিয়ে গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এসব ভোগ্য পণ্য ৯০ দিনের সাপ্লাইয়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানির সুযোগ প্রদান করা হচ্ছে। এই সুবিধা ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রযোজ্য থাকবে।
ব্যবসায়ীদের মাধ্যমগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে রমজানের ভোগ্য পণ্যের দাম অনেক কমলেও দেশে ঋণপত্র খোলা ও ডলার সংকট মিলিয়ে পণ্যের দাম বেশি পড়ছে। তার পরও সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। সঠিক তদারকি করা গেলে সুফল মিলবে বলেও ব্যবসায়ীদের অভিমত। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, রমজানের পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এই উদ্যোগগুলো অত্যন্ত ইতিবাচক। তাঁরা মনে করেন, একই সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোরও ইতিবাচক ভ‚মিকায় থাকতে হবে। কারণ ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ওপরই ঋণপত্র খোলা, বাকিতে পণ্য আমদানির সুফল নির্ভর করছে। একটি দিনও যেন ঋণপত্র খুলতে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রোজার মাসে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে পারাটা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি।