পল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে নিহত ১ ॥ রিভজী-আমানসহ আটক দুই শতাধিক

20

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আমানুল্লাহ আমান দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন সহ দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে তাদের নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে আটক করা হয়।
এর আগে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে আটক করে পুলিশ।
ডিএমপির মতিঝিল জোনের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, এখনও বিএনপির সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়নি। কিন্তু তারা রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। বারবার অনুরোধ করার পরও তারা কথা শোনেননি। পুলিশ তাদের তুলে দিতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
এর আগে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিতে মকবুল হোসেন নামে একজন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে তার মৃত্যু হয়। নিহতের বিস্তারিত পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
উদ্ধারকারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, দলীয় কার্যালয়ের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকাল পৌনে চারটায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, নিহতের শরীরে ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন মকবুল, রনি, মনির, আনোয়ার ইকবাল, খোকন, আসাদুজ্জামান, বিপ্লব হাওলাদার, আরেফিন আহামেদ, মেহেদী হাসান, জহির। তাদেরকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরিকে বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য রাখা হয়েছে।
দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। পরে পুলিশ পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। তবে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিএনপিকর্মীরা মাঝে মাঝেই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন। পুলিশও পাল্টা ছররা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ সিনিয়র কয়েকজন নেতা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন। অফিসের নিচে অবস্থান করছিলেন নেতাকর্মীরা। দুপুর আড়াইটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান নেয় কার্যালয়ের সামনে। এরপর ৩টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়।
বিকাল ৪টার দিকে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিলে তাদের সরে যেতে বলা হয়। এজন্য তাদের সময় দেওয়া হলেও তারা সরে যায়নি। এ সময় পুলিশ তাদের উঠিয়ে দিতে গেলে তারা অতর্কিতে পুলিশের ওপরে হামলা করে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত পুলিশের কতজন সদস্য আহত হয়েছে এ বিষয়ে তথ্য নাই। এছাড়া কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না।
হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, তাদের রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিতে গেলে শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। তখন তো এখানে সংঘর্ষ হবেই।
এদিকে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ করেই বিএনপির কার্যালয়ের উল্টো পাশ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়লে বিস্ফোরণে পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। পুরো নয়া পল্টন, ফকিরাপুলসহ আশপাশের এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কিছুক্ষণ পরপর হঠাৎ করেই বিএনপি নেতাকর্মীরা গলি থেকে বেরিয়ে এসে ককটেল নিক্ষেপ করছে। এ সময়ে পুলিশকেও পাল্টা আক্রমণ করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত এলাকায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। আর বিএনপির কর্মীরা বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়েছেন। রাজপথে বের হয়ে এসে ইটপাটকেল ছুঁড়ছেন তারা। টিয়ার শেলের ধোঁয়ায় পুরো এলাকা ছেয়ে গেছে। পুলিশ দফায় দফায় টিয়ার শেল ছুঁড়ছে।
এর সময় ফকিরাপুল পানির ট্যাংকের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
সরেজমিনে থাকা একাধিক সংবাদকর্মী জানিয়েছের, বিকাল পৌনে ৪টা পর্যন্ত বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত ও একজন পুলিশ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে।
সাংবাদিক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুটি অ্যাম্বুলেন্স আসলে পুলিশ দাঁড়াতে না দিয়ে বের করে দেয়। এসময় গেটে আসা নেতাকর্মীদের ওপরে আবার ছররা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। কার্যালয়ের মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত অবস্থায় আছেন বলে জানান বিএনপির কর্মীরা।
পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে বলে দাবি করেন বিএনপির কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে বলে দাবি করেন বিএনপির কর্মীরা
এর আগে দুপুর ১২টা থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় একাধিক সাঁজোয়া যান, প্রিজন ভ্যান এবং অতিরিক্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করে পুলিশ। ফকিরাপুল, কাকরাইল এলাকাও তারা টহল দেয়। বিকাল ৪টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
নয়া পল্টনে বিএনপি সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ নয়া পল্টনে বিএনপি সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কতজন আহত হয়েছেন।
বুধবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে সাংবাদিকদের বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। যতই হামলা করা হোক আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিএনপি অফিসে তালাবদ্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। তার আগে সেখান থেকে অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় অফিসের বারান্দায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবস্থান নেন। তিনি সেখানে বসে পড়েন।